সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে মায়েদের বুকের দুধের উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এই দুধ নবজাতকের পুষ্টির একমাত্র উপাদান তাই যদি শৈশবেই পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় তবে তা শিশুর জন্য মোটেও সুখকর নয় । যদিও এই হ্রাসের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক জটিল কারণ, যেগুলো শারীরিক, মানসিক, এমনকি পারিপার্শ্বিকও।
শারীরিক কারণ:
- হরমোনের তারতম্য: স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদনে প্রোল্যাকটিন ও অক্সিটোসিন হরমোনের ভূমিকা অপরিসীম। প্রসব-পরবর্তী মানসিক চাপ, অত্যধিক ক্লান্তি, কিংবা থাইরয়েডের সমস্যা এই হরমোনগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে দুগ্ধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।
- পুষ্টির অভাব: স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি ও জল গ্রহণ অপরিহার্য। ভিটামিন, খনিজ ও জলের অভাব দুধের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এই সময় প্রতিদিন বাড়তি ৪৫০-৫০০ ক্যালোরির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে জল পান করা জরুরি।
- শারীরিক সমস্যা: ডায়াবেটিস, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস), উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাও দুগ্ধের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, স্তনে কোনো অস্ত্রোপচার বা আঘাতের কারণে দুগ্ধনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
- অনিয়মিত স্তন্যদান ও পাম্পিং: নিয়মিত শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ালে বা সঠিকভাবে বুকের দুধ পাম্প না করলে শরীরের দুগ্ধ উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
মানসিক কারণ:
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দুগ্ধ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় হরমোন ক্ষরণে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, প্রসবের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহে মা যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন, তবে দুগ্ধ উৎপাদন কমে যেতে পারে।
- আত্মবিশ্বাসের অভাব: অনেক মা নিজের দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে সংশয় পোষণ করেন, যা মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে সমস্যাটিকে জটিল করে তোলে।
পরিবেশগত কারণ:
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চা-কফি, অ্যালকোহল সেবন দুগ্ধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
- কীটনাশক ও রাসায়নিকের সংস্পর্শ: কীটনাশকযুক্ত খাবার বা পরিবেশ দূষণের সংস্পর্শে এলে দুধের পরিমাণ ও গুণমান দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- অতিরিক্ত ওষুধ সেবন: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দুগ্ধ উৎপাদন কমে যেতে পারে।
তবে বেশ কিছু পন্থা মেনে চললে স্বাভাবিক নিয়মেই অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে বুকের দুধ ।
অধিক পরিমাণে জল পান করা
মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জল শরীরের প্রতিটি কোষের কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং দুধ উৎপাদনে সহায়তা করে। প্রাথমিকভাবে, দুধ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় মায়ের শরীরের প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহার হয়। তাই জল পান করা মায়ের জন্য বিশেষভাবে জরুরি।
দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে শরীরের জলের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। কিছু মা মনে করেন যে দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিশেষ পানীয় পান করতে হবে, কিন্তু সাধারণ জলই এই কাজের জন্য যথেষ্ট।
জল শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সবসময় মায়ের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা প্রয়োজন। জলের পাশাপাশি ফলের রস, গরম স্যুপ ও হালকা চা পান করাও উপকারী হতে পারে। তবে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি ও সোডা পান এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলি শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে।
মায়েরা জল পান করার জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবার স্তন্যপান করানোর পর এক গ্লাস জল পান করা যেতে পারে। এছাড়া, প্রতিদিনের কাজের মধ্যে কিছু বিরতি নিয়ে জল পান করার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।
সব মিলিয়ে, মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য অধিক পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। জল পান করার এই অভ্যাস বজায় রাখলে মায়ের দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকে এবং শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত হয়।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাদ্য মায়ের শরীরকে শক্তি যোগায় এবং দুধ উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। মায়ের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
প্রোটিন হলো দুধ উৎপাদনের একটি প্রধান উপাদান। প্রোটিনের ঘাটতি হলে দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে। প্রোটিনের ভালো উৎস হিসেবে শাকসবজি, ডাল, মাংস, এবং দুধ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে, মুরগির মাংস এবং ডাল প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস।
ক্যালসিয়াম মায়ের দেহের হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। দুধ, দই, পনির, এবং ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ শাকসবজি, যেমন পালং শাক, ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হিসেবে পরিচিত।
আয়রন মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে, যা দুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। আয়রনের ঘাটতি মায়ের ক্লান্তি এবং দুধ উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। লাল মাংস, পালং শাক, এবং ডাল আয়রনের ভালো উৎস।
ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য মায়ের শরীরের সাধারণ স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং দুধের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে। ফলমূল, যেমন আপেল, কলা, এবং কমলা ভিটামিনের ভালো উৎস। এছাড়া শাকসবজি, যেমন গাজর এবং ব্রকলি ভিটামিনসমৃদ্ধ।
মায়ের দেহের পানির চাহিদা পূরণ করাও অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং সঠিক খাবার নির্বাচনের মাধ্যমে মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব।
প্রচুর বিশ্রাম নেওয়া
মায়ের দুধ উৎপাদনে বিশ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘুম এবং বিশ্রামের অভাব দুধ উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় 🔎︎পুষ্টির অভাব ঘটাতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, যেন মায়ের শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় এবং দুধ উৎপাদনের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলতে পারে।
মা হিসেবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, ঘুমের সময় কমে যেতে পারে। তবে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। দিনের মধ্যে ছোট ছোট বিরতি নিয়ে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, শিশুকে ঘুমানোর সময় মা নিজেও কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারেন। এতে শরীরের ক্লান্তি কমবে এবং দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে।
বিশ্রামের অভাবে শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা দুধ উৎপাদনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম এই হরমোনের মাত্রা কমিয়ে এনে দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। তাই, মায়ের দুধ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবারের সদস্যদের সহায়তা গ্রহণ করে মাকে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। তারা ঘরের কাজকর্মে সহায়তা করলে মা বিশ্রামের জন্য বেশি সময় পাবেন। এছাড়া, ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনও মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে বিশ্রাম দিতে সহায়তা করতে পারে।
সার্বিকভাবে, মায়ের দুধ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম অপরিহার্য। ঘুম ও বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং মানসিক চাপ কমিয়ে আনার মাধ্যমে মা তার দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন।
দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট খাবার
মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান উন্নত হয়।
শাকসবজি: শাকসবজি, বিশেষ করে পালং শাক, মেথি শাক এবং অন্যান্য সবুজ শাক, দুধ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ থাকে যা মায়ের স্বাস্থ্য ও দুধ উৎপাদনের জন্য জরুরি।
ওটমিল: ওটমিল বা ওটস একটি প্রাচীন প্রাকৃতিক উপাদান যা দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সহজে পাচ্য এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, যা মায়ের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া ওটমিল খেলে মায়ের মানসিক চাপও কমে।
রসুন: রসুন একটি প্রাকৃতিক গ্যালাক্টাগগ যা দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মায়ের দুধের স্বাদ উন্নত করে এবং শিশুর খাবার গ্রহণের আগ্রহ বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত রসুন খেলে কিছু মায়ের পেটের সমস্যা হতে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
আদা: আদা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি হজমশক্তি উন্নত করে এবং মায়ের শরীরের সঞ্চালন ব্যবস্থা ভাল রাখে, যা দুধ উৎপাদনের জন্য জরুরি।
বাদাম: বাদাম, বিশেষ করে আখরোট এবং আমন্ড, দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এগুলোতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন থাকে যা মায়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং দুধের পুষ্টিগুণ বাড়ায়।
মালিশ এবং স্তনপান সংক্রান্ত টিপস
মায়ের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মালিশ এবং নিয়মিত স্তনপান করানো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্তনে নিয়মিত মালিশ করলে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং স্তনপানে শিশুর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। মালিশের ক্ষেত্রে, স্তনের উপরের অংশ থেকে নিচের দিকে আস্তে আস্তে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং দুধের নালীগুলি খোলতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট করে মালিশ করা উচিত, যা দুধের প্রবাহ আরও উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।
এছাড়াও, শিশুকে প্রতিনিয়ত স্তনপান করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর অন্তর শিশুকে স্তনপান করানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবার ১০-১৫ মিনিট ধরে স্তনপান করানো উচিত যাতে শিশুর প্রয়োজনীয় পরিমাণ দুধ পেতে পারে এবং মায়ের শরীরে দুধ উৎপাদনের সংকেত যায়। স্তনপান করানোর সময়, মাকে আরামদায়ক অবস্থানে বসা বা শোওয়া উচিত যাতে স্তনপান একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়।
শিশু যখন সঠিকভাবে স্তনপান করে, তখন মায়ের দুধ উৎপাদন প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, স্তনপান করানোর সময় মায়ের মধ্যে হরমোন অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়, যা স্তনের দুধের প্রবাহ সহজ করে। সুতরাং, নিয়মিত মালিশ এবং শিশুকে যথাযথভাবে স্তনপান করানো মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম
মায়ের দুধ উৎপাদনে ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক।
প্রথমত, হালকা কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা জগিং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়ক। রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি মায়ের দুধের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। মৃদু কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি। মানসিক চাপ কমলে হরমোনের ব্যালেন্স বজায় থাকে যা দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম যেমন প্রণায়াম, ধ্যান এবং মৃদু স্ট্রেচিং মায়ের শরীর ও মনকে রিল্যাক্স করতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় ১৫-২০ মিনিট যোগব্যায়ামের জন্য সময় বের করা যেতে পারে।
এছাড়াও, পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম যেমন পুশ-আপস, স্কোয়াট এবং ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ মায়ের শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে। পেশির শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে মায়ের শারীরিক সুস্থতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক।
অবশেষে, নিয়মিত ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম মায়ের ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত এবং মানসম্পন্ন ঘুম দুধ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোটকথা, মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপায়। নিয়মিত ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
মায়ের দুধ উৎপাদনের উপর মানসিক স্বাস্থ্যের গভীর প্রভাব রয়েছে। মানসিক চাপ হরমোনের নিঃসরণে প্রভাব ফেলে, যা দুধ উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে কার্যকর।
ধ্যান বা মেডিটেশন মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সহায়তা করে, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কিছুটা সময় নির্ধারণ করে ধ্যান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ধ্যানের মাধ্যমে মনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়, যা মানসিক চাপ হ্রাস করে এবং দুধ উৎপাদনের উন্নতি ঘটায়।
যোগব্যায়ামও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিভিন্ন যোগাসন মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে শিথিল করে। নিয়মিত যোগব্যায়াম স্ট্রেস হ্রাস করতে সাহায্য করে, ফলে দুধ উৎপাদনে সহায়ক হয়।
শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমানোর একটি কার্যকর উপায়। গভীর শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখে। প্রতিদিন কিছুক্ষণ গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
সার্বিকভাবে, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট মায়ের দুধ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমিয়ে মায়ের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা দুধ উৎপাদন সচল রাখতে সহায়ক হয়।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
প্রাকৃতিক উপায়গুলি মাঝে মাঝে প্রত্যাশিত ফলাফল দিতে ব্যর্থ হতে পারে, বিশেষ করে যদি কোনও জটিলতা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে, মায়েদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা মায়েদের বুকের দুধ উৎপাদনের সমস্যা নির্ধারণ এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম।
প্রথমত, চিকিৎসকগণ মায়েদের শারীরিক পরীক্ষা করে দেখেন এবং প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেস্ট করতে পারেন। এই পরীক্ষাগুলি মায়ের দুধ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করা যেকোনো শারীরিক বা হরমোনজনিত সমস্যা সনাক্ত করতে সাহায্য করে। যেমন, থাইরয়েড সমস্যা বা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) মায়ের দুধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।
দ্বিতীয়ত, চিকিৎসকগণ বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে যথাযথ চিকিৎসার সুপারিশ করেন। কখনও কখনও, মায়েদের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কিছু ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। ডোমপেরিডন বা মেটোক্লোপ্রামাইডের মতো কিছু ওষুধ মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এই ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধগুলি গ্রহণ করা উচিত নয়।
তৃতীয়ত, চিকিৎসকগণ সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শ দিতে পারেন। সুষম খাদ্যগ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ কমানো মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও, মায়েদের নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি এবং সঠিক স্তন্যপান টেকনিক শেখাতে পারেন, যা মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়াতে কার্যকর।
মায়েদের বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ঘরোয়া উপায়গুলি প্রাথমিকভাবে কার্যকর হতে পারে, তবে যদি তা কার্যকর না হয় বা কোনও জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। চিকিৎসকগণ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম, যা মায়ের দুধ উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে।