অমলতাস, বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা, একটি বহুল পরিচিত ঔষধি গাছ যা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এই গাছটি ভারত এবং বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়, অনেকেই এটাকে বাঁদরলাঠি হিসাবে চেনেন । অমলতাস গাছের উচ্চতা সাধারণত ১০ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং এর পাতাগুলি চিরহরিৎ, যা সারা বছর সবুজ থাকে। এটি প্রধানত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ভালোভাবে জন্মে।
অমলতাস গাছের প্রধান আকর্ষণ হল এর উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুল, যা গ্রীষ্মকালে ফোটে এবং গাছকে একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রদান করে। এই গাছের ফল একটি দীর্ঘ শুঁটি আকারে আসে, যা ঔষধি গুণাগুণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ফলটি সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ সেমি দীর্ঘ হয় এবং এর ভেতরে কালো রঙের বীজ থাকে।
অমলতাস গাছের চাষাবাদ সাধারণত সহজ এবং এটি বিভিন্ন ধরনের মাটিতে ভালোভাবে জন্মে। তবে, গাছটি সবচেয়ে ভালোভাবে বেলে দোআঁশ মাটিতে বৃদ্ধি পায়। এটি সাধারণত পূর্ণ সূর্যালোক পছন্দ করে এবং তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে গাছটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
এই গাছের বিভিন্ন অংশ ঔষধি গুণাগুণের জন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। অমলতাসের ফল, পাতা এবং বাকল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফলের নির্যাস প্রধানত কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি প্রাকৃতিক রেচক হিসাবেও পরিচিত। পাতার নির্যাস ত্বকের রোগ যেমন একজিমা এবং খোস-পাঁচড়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বাকল নির্যাস অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণের জন্য পরিচিত, যা বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগ নিরাময়ে সহায়ক।
অমলতাসের ফলের পুষ্টিগুণ
অমলতাসের ফল প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই ফলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ মিশ্রণ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
প্রথমত, অমলতাসের ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে ফ্রি র্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও, এটি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক যা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দ্বিতীয়ত, অমলতাসের ফলে রয়েছে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য এবং এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং শরীরের কোষের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও, অমলতাসের ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য। এটি মাংসপেশী সংকোচন ও স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অমলতাসের ফলে পটাশিয়ামও পাওয়া যায় যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক। পটাশিয়াম শরীরের তরল ও ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পাশাপাশি, অমলতাসের ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এই ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, অমলতাসের ফল একটি পুষ্টির ভান্ডার যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত এই ফল খাওয়া শরীরের সামগ্রিক পুষ্টি বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
নীচের টেবিলে দেওয়া হল:
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | স্বাস্থ্য উপকারিতা |
---|---|---|
শক্তি | ২৮০ ক্যালোরি | শক্তি প্রদান করে |
কার্বোহাইড্রেট | ৬৫ গ্রাম | তাত্ক্ষণিক শক্তি প্রদান এবং হজমের সহায়ক |
প্রোটিন | ৩ গ্রাম | কোষের গঠন ও মেরামত |
ফ্যাট | ০.৫ গ্রাম | প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড সরবরাহ |
ডায়েটরি ফাইবার | ২.৫ গ্রাম | হজমের উন্নতি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ |
ভিটামিন সি | ৮ মিলিগ্রাম | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি |
ক্যালসিয়াম | ১৪০ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে |
পটাসিয়াম | ১১০ মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে |
ফসফরাস | ৩০ মিলিগ্রাম | শক্তি উৎপাদন এবং কোষের কাজের জন্য জরুরি |
ম্যাগনেসিয়াম | ২৫ মিলিগ্রাম | পেশী ও স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে |
লৌহ (আয়রন) | ২.৫ মিলিগ্রাম | রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে |
ভিটামিন এ | ২.৫ মাইক্রোগ্রাম | দৃষ্টিশক্তি এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে |
ফোলেট | ২০ মাইক্রোগ্রাম | কোষ বিভাজন এবং বৃদ্ধি সহায়ক |
থায়ামিন (ভিটামিন বি১) | ০.২ মিলিগ্রাম | শক্তি উৎপাদন ও স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে |
রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২) | ০.১ মিলিগ্রাম | কোষের বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা সহায়ক |
নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩) | ০.৫ মিলিগ্রাম | বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে |
ভিটামিন বি৬ | ০.১ মিলিগ্রাম | স্নায়ুর কার্যকারিতা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি |
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫) | ০.৩ মিলিগ্রাম | চর্বি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে |
সেলেনিয়াম | ১ মাইক্রোগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে |
জিঙ্ক | ১ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে |
সোডিয়াম | ৫ মিলিগ্রাম | শরীরে তরল ভারসাম্য রক্ষা করে |
পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারীতা
অমলতাসের (ক্যাসিয়া ফিস্টুলা) ফল পরিপাকতন্ত্রের জন্য অসাধারণ উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে এই ফলটি প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর ল্যাক্সেটিভ প্রভাব কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। অমলতাসের ফলের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের গতিশীলতা উন্নত করে।
অমলতাসের ফলের প্রধান উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে ফাইবার, যা অন্ত্রের চলাচল সহজ করে এবং মলত্যাগ সহজ করে তোলে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি অন্ত্রের মধ্যে উপস্থিত ক্ষুদ্রাণুগুলিকে সরিয়ে দিতে সহায়তা করে। ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা এবং অন্যান্য যৌগগুলি অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অমলতাসের ফলের ল্যাক্সেটিভ প্রভাবের কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের চলাচলকে নিয়মিত রাখে। নিয়মিত অমলতাসের ফল গ্রহণ করার ফলে অন্ত্রের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা হজম প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। এছাড়াও, এই ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলি অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সহায়ক, যা হজম প্রক্রিয়াকে আরো মসৃণ করে তোলে।
অমলতাসের ফলের উপকারীতা শুধু হজম প্রক্রিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যও রক্ষা করে। ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি অন্ত্রের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালগুলি দূর করতে সহায়ক, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সার্বিকভাবে, অমলতাসের ফলের নিয়মিত ব্যবহার পরিপাকতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। এর ল্যাক্সেটিভ প্রভাব, ফাইবার, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানগুলি হজম প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অমলতাস
অমলতাসের ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। ক্যাসিয়া ফিস্টুলা, যা অমলতাস নামে পরিচিত, প্রাকৃতিকভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রভাব বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
অমলতাসের ফলের মধ্যে প্রাপ্ত বিভিন্ন বায়োকেমিক্যাল যৌগ, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ট্যানিন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এই যৌগগুলি প্রাকৃতিক ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
🔎︎ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অমলতাসের ফল সেবনের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, অমলতাসের ফলের নির্যাস গ্লুকোজ সহ্যশক্তি বাড়াতে এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া কমাতে সাহায্য করে।
অমলতাসের ফলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হল এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস একটি সাধারণ সমস্যা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ অমলতাসের ফল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, অমলতাসের ফল রক্তে চর্বির মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।
অতএব, অমলতাসের ফল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকরী উপায় হতে পারে। তবে, যেকোনো নতুন প্রাকৃতিক উপাদান সেবন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ত্বকের যত্নে অমলতাস
অমলতাসের ফল ত্বকের যত্নে একটি প্রাচীন ও প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। অমলতাসের ফলের নির্যাস ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যাগুলি যেমন একজিমা, সোরিয়াসিস এবং ব্রণের চিকিৎসায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।
অমলতাসের ফলের ব্যবহার পদ্ধতি সহজ এবং সাশ্রয়ী। ত্বকের যত্নে অমলতাসের ফলের নির্যাস সরাসরি ত্বকে লাগানো কিংবা বিভিন্ন ত্বকের পরিচর্যার প্রোডাক্টে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। অমলতাসের ফলের নির্যাস দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ত্বককে মসৃণ করতে সাহায্য করে।
ফেস মাস্ক তৈরি করতে অমলতাসের ফলের নির্যাসের সঙ্গে মধু ও দই মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করা যায়। এই পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিয়ে পরে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ত্বকের গভীরে থাকা ময়লা ও তেল পরিষ্কার হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ হয়।
অমলতাসের ফলের নির্যাস ত্বকের পুনর্জীবনী শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, যা ত্বকের বয়সজনিত লক্ষণগুলি কমাতে কার্যকর। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে ওঠে নরম, কোমল এবং প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল। তাই, ত্বকের যত্নে অমলতাসের ফলের ব্যবহার একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর সমাধান।
ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধিতে অমলতাস
অমলতাসের ফল, যা ক্যাসিয়া ফিস্টুলা নামেও পরিচিত, ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
অমলতাসের ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে যা শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্তর বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা সাদা রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়ক এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়াও, অমলতাসের মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ কম্পাউন্ডগুলো প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব ফেলে। এই ফলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব শরীরে বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে, শরীরের ইমিউন সেলগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
অমলতাসের ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার ও মিনারেলগুলোও শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু রাখতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে টক্সিন নির্গত করতে সহায়তা করে। মিনারেলসমূহ যেমন পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ইমিউন সিস্টেমের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব, অমলতাসের ফল নিয়মিতভাবে গ্রহণ করলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব
অমলতাসের (ক্যাসিয়া ফিস্টুলা) ফলের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা হলো এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব। অমলতাসের ফলে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যা প্রদাহ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রদাহ কমানোর এই ক্ষমতা অমলতাসের ফলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক চিকিৎসা উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
অমলতাসের ফলে থাকা প্রধান উপাদানের মধ্যে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল যৌগগুলি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব প্রদর্শন করে যা শরীরের বিভিন্ন প্রদাহজনিত সমস্যায় উপকারি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিবাত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অমলতাসের ফলের নিয়মিত সেবনে উপকার পেতে পারেন।
এছাড়া, অমলতাসের ফলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব বিভিন্ন চর্মরোগের চিকিৎসাতেও কার্যকর। প্রদাহজনিত চর্মরোগ যেমন একজিমা বা সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে অমলতাসের ফলের নির্যাস প্রয়োগ করলে প্রদাহ কমে যায় এবং ত্বকের অবস্থা উন্নত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে অমলতাসের ফল প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যেমন সাইটোকাইন এবং প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। এই প্রভাবের ফলে শরীরের প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আসে এবং বিভিন্ন প্রদাহজনিত ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
অমলতাসের ফলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলী প্রমাণিত হওয়ার পর থেকে এটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। নিয়মিত অমলতাসের ফল সেবন করলে শরীরের সামগ্রিক প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া কমানো সম্ভব এবং এটি বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক হতে পারে।
অমলতাসের ফলের অন্যান্য উপকারিতা
অমলতাসের ফলের আরও কিছু অতিরিক্ত উপকারিতা রয়েছে যা সাধারণত কম পরিচিত। এই ফলটি শুধু পুষ্টিকর নয়, এর অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করে।
প্রথমত, ব্যথা নিরসনে অমলতাসের ফল অত্যন্ত কার্যকর। ফলের নির্যাস প্রাকৃতিক পেইনকিলার হিসেবে কাজ করে, যা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যথা কমাতে সহায়ক। এটি মাংসপেশীর ব্যথা হোক বা আর্থ্রাইটিসজনিত ব্যথা, অমলতাসের ফলের ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য আরাম পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত, অমলতাসের ফল ডিটক্সিফিকেশনের জন্যও পরিচিত। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুস্থ রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। নিয়মিত অমলতাসের ফল সেবনে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও অমলতাসের ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ফলের নির্যাস প্রাকৃতিক এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। মানসিক প্রশান্তি পেতে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
অমলতাসের ফলের এই অতিরিক্ত উপকারিতাগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সুবিধা এনে দেয়। প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কারণে অমলতাসের ফলের ব্যবহার স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। তাই, বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সমাধানে এই ফলের ব্যবহার আরও বাড়ানো উচিত।