গর্ভধারণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় শরীর এবং মন উভয়কেই প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায়, যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়ামের ভূমিকা অপরিসীম। যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের শক্তি এবং মনের প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়, যা গর্ভধারণের প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে সহায়ক।
শরীরের দিক থেকে, যোগব্যায়াম বিভিন্ন পেশী এবং জয়েন্টগুলোকে মজবুত এবং নমনীয় করে তোলে। এটি রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সক্রিয় রাখে। নিয়মিত যোগব্যায়াম অভ্যাস করলে পিঠের ব্যথা, মাথাব্যথা এবং অন্যান্য সাধারণ শারীরিক সমস্যাগুলির প্রকোপ কমে যায়।
মনের দিক থেকে, প্রাণায়াম এবং ধ্যান মনের প্রশান্তি এবং স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত প্রাণায়াম অভ্যাস করলে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ কমে যায়। এটি মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সুখী ও স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতির সৃষ্টি করে।
গর্ভধারণের প্রক্রিয়া মানসিক এবং শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই সময়ে শরীর এবং মনকে সুস্থ এবং স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত জরুরি। যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম অভ্যাস করলে শরীর ও মনের মধ্যে একটি সুন্দর সামঞ্জস্য বজায় থাকে, যা গর্ভধারণের সময় প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রদান করতে পারে।
তাই, গর্ভধারণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম অভ্যাস করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি শুধু গর্ভধারণের প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে না বরং মা ও শিশুর স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত রাখবে।
গর্ভধারণের ক্ষেত্রে যোগব্যায়ামের গুরুত্ব
গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য যোগব্যায়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কেবলমাত্র শরীরের স্থিতিস্থাপকতা এবং শক্তি বৃদ্ধি করে না, বরং মানসিক এবং আবেগগত সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। যোগব্যায়াম নিয়মিত অনুশীলন করলে শরীরের বিভিন্ন পেশী এবং সন্ধিগুলি আরও মজবুত ও স্থিতিশীল হয়, যা গর্ভধারণের সময় প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রদান করে।
যোগব্যায়াম কেবল শারীরিক শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে না, এটি মানসিক প্রশান্তি এবং ভারসাম্যও প্রদান করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন বা প্রাণায়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক, যা গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিথিল ও মনোসংযোগ বজায় রেখে, নারীরা তাদের শরীর এবং মনকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন।
গর্ভধারণের সময় হরমোনের পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিয়মিত যোগব্যায়াম এই পরিবর্তনগুলি মোকাবিলা করতে এবং শরীরকে সমর্থন করতে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, কিছু নির্দিষ্ট আসন পিঠের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়ক।
এছাড়া, যোগব্যায়াম অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রসবের সময় ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঠিক নিয়ন্ত্রণ মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়ক।
অতএব, গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম অনুশীলন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে, মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে এবং গর্ভধারণের সময় বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।
প্রাণায়ামের ভূমিকা
গর্ভধারণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রাণায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাণায়াম, যা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের একটি প্রাচীন যোগব্যায়াম পদ্ধতি, মানসিক প্রশান্তি এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। প্রাণায়ামের মূল উদ্দেশ্য হলো শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক এবং শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা করা।
গর্ভধারণের সময় মহিলাদের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এমন সময়ে প্রাণায়াম মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত প্রাণায়ামের অভ্যাস মানসিক চাপ হ্রাস করে এবং স্নায়ুকে প্রশান্ত করতে সহায়ক। বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, নিয়মিত প্রাণায়াম অভ্যাস করলে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা হ্রাস পায়, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
প্রাণায়াম শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হওয়ার কারণে গর্ভধারণের সময় শারীরিক সুস্থতাও বজায় রাখতে সহায়ক। নিয়মিত প্রাণায়ামের অভ্যাস ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে। এর ফলে গর্ভস্থ শিশুর উন্নয়নে সহায়ক হয় এবং মাতৃস্বাস্থ্যও উন্নত হয়।
বিশেষভাবে, গর্ভধারণের সময় বালাসানা (শিশু ভঙ্গি), ভ্রমরি প্রাণায়াম এবং অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম বিশেষভাবে কার্যকর। এই যোগব্যায়ামগুলি সহজ এবং নিরাপদ, যা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
অতএব, গর্ভধারণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রাণায়ামের গুরুত্ব বুঝে নিয়ে নিয়মিত অভ্যাস করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধুমাত্র মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক নয়, বরং শারীরিক সুস্থতাও বজায় রাখতে অত্যন্ত কার্যকর।
প্রারম্ভিক যোগব্যায়াম আসন
গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য কিছু সহজ এবং প্রারম্ভিক যোগব্যায়াম আসন খুবই কার্যকর। এই আসনগুলি শরীর ও মনকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন। নিচে কিছু প্রাথমিক যোগব্যায়াম আসনের পদ্ধতি এবং তাদের উপকারিতা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
সুকাসন (আসন)
সুকাসন হলো ধ্যানের জন্য একটি সহজ এবং আরামদায়ক আসন। এই আসনটি মেরুদণ্ড সোজা করে বসার মাধ্যমে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি মানসিক শান্তি প্রদান করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ উন্নত করে।
ভদ্রাসন (শুভ আসন)
ভদ্রাসন, যেটি শুভ আসন নামেও পরিচিত, এটি মূলত পদ্মাসনের একটি সহজ রূপ। এই আসনটি পেটের পেশী এবং উরুর পেশীকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে।
ভুজঙ্গাসন (কোবরা পোজ)
ভুজঙ্গাসন, বা কোবরা পোজ, পিঠের পেশীগুলি প্রসারিত করার একটি চমৎকার আসন। এই আসনটি মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং পিঠের ব্যথা কমায়। এছাড়া, এটি গর্ভাশয় এবং ডিম্বাশয়ের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় যা গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে সহায়ক।
মার্জারিয়াসন (ক্যাট-কাউ পোজ)
মার্জারিয়াসন, বা ক্যাট-কাউ পোজ, একটি গতিশীল আসন যা মেরুদণ্ডকে নমনীয়তা প্রদান করে। এটি মেরুদণ্ডের পেশীগুলি প্রসারিত করে এবং পেটের পেশীগুলি শক্তিশালী করে। এই আসনটি শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ উন্নত করে এবং মানসিক শান্তি প্রদান করে।
এই প্রারম্ভিক যোগব্যায়াম আসনগুলি নিয়মিত অভ্যাস করলে শরীরকে সুস্থ ও মনের প্রশান্তি বজায় রাখা সম্ভব। গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য এই আসনগুলি অত্যন্ত উপকারী।
উন্নত যোগব্যায়াম আসন
গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় শরীরের স্থিতিস্থাপকতা এবং শক্তি বাড়ানোর জন্য উন্নত যোগব্যায়াম আসনগুলি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এই আসনগুলি শুধুমাত্র শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। এখানে আমরা কয়েকটি উন্নত যোগব্যায়াম আসনের তালিকা দিয়েছি যা গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
বাকাসন (Bakasana): এই আসনটি বাহু এবং কাঁধের পেশীকে শক্তিশালী করে এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি কেন্দ্রিক স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে।
উষ্ঠ্রাসন (Ustrasana): এই আসনটি পিছনের পেশী এবং মেরুদণ্ডকে উত্তেজিত করে। এটি কোমর এবং পেটের পেশীকে প্রসারিত করে, যা গর্ভধারণের সময় শরীরের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শীর্ষাসন (Sirsasana): মাথা নিচে রেখে করা এই আসনটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
অধোমুখ শ্বানাসন (Adho Mukha Svanasana): এই আসনটি শরীরের পুরো পেশীকে প্রসারিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এটি শরীরের স্থিতিস্থাপকতা এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, যা গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এগুলি ছাড়াও অন্যান্য উন্নত যোগব্যায়াম আসন যেমন একপদ রাজকপোতাসন (Eka Pada Rajakapotasana) এবং নটরাজাসন (Natarajasana) ও গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য উপকারী হতে পারে। নিয়মিত এই আসনগুলি অভ্যাস করলে শরীরে স্থিতিস্থাপকতা এবং শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া নিশ্চিত।
প্রারম্ভিক প্রাণায়াম টেকনিক
গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় প্রারম্ভিক প্রাণায়াম টেকনিকগুলি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এই টেকনিকগুলি শরীর এবং মনের জন্য উপযুক্ত, এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এখানে কয়েকটি সহজ এবং প্রারম্ভিক প্রাণায়াম টেকনিকের তালিকা দেওয়া হল যা গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য উপযুক্ত:
অনুলোম বিলোম
এই প্রাণায়াম টেকনিকটি শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ সুষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এক নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস নিয়ে অন্য নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দেওয়া হয়। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে দেয় এবং 🔎︎রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ভ্রামরি প্রাণায়াম
এই টেকনিকটি ‘মধুমক্ষিকার গুঞ্জন’ নামেও পরিচিত। শ্বাস নিতে নিতে নাক দিয়ে গুঞ্জনের মতো শব্দ করতে হয়। এটি মনকে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
কপালভাতি
কপালভাতি প্রাণায়াম একটি শক্তিশালী শ্বাস-প্রশ্বাসের টেকনিক যা শ্বাস নিতে নিতে পেটে চাপ দিতে হয়। এটি হজম শক্তি উন্নত করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
উজ্জাই প্রাণায়াম
এই টেকনিকটি শ্বাস নিতে নিতে গলার পেশির ব্যবহার করে। এটি শ্বাসপ্রশ্বাসের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং মনকে স্থির রাখতে সাহায্য করে।
এই প্রারম্ভিক প্রাণায়াম টেকনিকগুলি গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে শরীর ও মনের সুষমতা বজায় রাখা সম্ভব এবং গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় মানসিক চাপকে কমিয়ে আনা যায়।“`html
উন্নত প্রাণায়াম টেকনিক
প্রাণায়াম এমন একটি প্রাচীন যোগব্যায়াম পদ্ধতি যা শ্বাসপ্রশ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ এনে মন এবং শরীরের মধ্যে সাদৃশ্য সৃষ্টি করে। উন্নত প্রাণায়াম টেকনিকগুলি মনের প্রশান্তি এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি সহায়ক হতে পারে। এই অংশে আমরা কিছু উন্নত প্রাণায়াম টেকনিকের কথা আলোচনা করবো যা গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময়ে বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।
নাড়ী শোধন (Nadi Shodhan): এই উন্নত প্রাণায়াম টেকনিকটি অল্টারনেট নাসাল ব্রিদিং নামেও পরিচিত। এটি শরীরের প্রাণশক্তিকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে এবং মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময়ে এটি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে কারণ এটি মানসিক চাপ কমিয়ে শরীরকে শিথিল করে।
কাপালভাতি (Kapalbhati): কাপালভাতি প্রাণায়াম এমন একটি টেকনিক যেখানে দ্রুত এবং জোরালো শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া হয়। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে এবং শক্তি বাড়াতে সহায়ক। গর্ভধারণের সময় শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে কাপালভাতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভ্রামরি (Bhramari): ভ্রামরি প্রাণায়াম, বা হামিং বি ব্রিদিং, মনকে শান্ত করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় নার্ভাস সিস্টেমকে শিথিল করতে এবং মানসিক প্রশান্তি আনতে সহায়ক হতে পারে।
উজ্জয়ী (Ujjayi): উজ্জয়ী প্রাণায়াম, বা ভিক্টোরিয়াস ব্রিদিং, ধীরে ধীরে এবং নিয়ন্ত্রিত শ্বাস নিতে সহায়ক। এটি শরীর এবং মনের মধ্যে গভীর সংযোগ সৃষ্টি করে। গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় এই টেকনিকটি মনকে শান্ত রাখতে এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
উন্নত প্রাণায়াম টেকনিকগুলি নিয়মিত অভ্যাস করলে গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে। এসব টেকনিক মনের প্রশান্তি বজায় রাখতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়ামের নিয়মিত অভ্যাসের গুরুত্ব
গর্ভধারণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম অভ্যাস করার গুরুত্ব অপরিসীম। শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি গর্ভধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এই দুটি প্রাচীন অনুশীলন এটি অর্জনে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত যোগব্যায়াম শরীরকে নমনীয়তা, শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে, যা গর্ভধারণ ও গর্ভাবস্থার সময় অপরিহার্য। বিভিন্ন আসন বা পোজ শরীরের বিভিন্ন অংশে কাজ করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
যোগব্যায়ামের পাশাপাশি, প্রাণায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত অভ্যাস মানসিক প্রশান্তি এবং সুষম বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি এবং শরীরের টক্সিন দূর করার মাধ্যমে, প্রাণায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। গর্ভধারণের সময় মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মানসিক চাপ প্রজনন ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধুমাত্র শরীরকে সুস্থ রাখে না, বরং মানসিক প্রশান্তি এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে। পরিবারের নতুন সদস্যকে স্বাগত জানানোর জন্য শরীর ও মন প্রস্তুত করার এটাই সেরা উপায়। অতএব, গর্ভধারণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম অভ্যাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভধারণের প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর পর্যায়। এই সময়ে, শরীর এবং মন উভয়কেই সুস্থ রাখতে প্রয়োজন যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়ামের নিয়মিত অনুশীলন। এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলি শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে, মানসিক চাপ কমায় এবং হরমোনের সমতা বজায় রাখে।
যোগব্যায়াম যেমন সূর্যনমস্কার, বাটারফ্লাই পোজ এবং প্রাণায়াম যেমন নাড়ি শুদ্ধি এবং ভ্রমরি গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এগুলি শুধু শরীরকে প্রস্তুত করে না, মনের শক্তিও বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এগুলি অনুশীলন করলে শরীর মজবুত হয় এবং মানসিক শান্তি লাভ করা যায়।
সকল পাঠকের জন্য আমাদের পরামর্শ হল, গর্ভধারণের প্রস্তুতির সময় এই যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়ামগুলি অভ্যাসে আনতে চেষ্টা করুন। আপনার শরীরকে শোনার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম নিন। আপনি যদি কোনো পেশাদার পরামর্শ প্রয়োজন মনে করেন, তবে যোগ ব্যায়াম প্রশিক্ষক বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
এই অনুশীলনগুলি শুধু শারীরিক প্রস্তুতির জন্য নয়, মানসিক প্রস্তুতির জন্যও উপকারী। গর্ভধারণের সময় আপনি এবং আপনার শিশুর জন্য একটি সুস্থ এবং সুখী পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে। নিয়মিত অনুশীলন আপনাকে গর্ভধারণের সময় আরও সচেতন এবং শক্তিশালী করবে।
আশা করি এই যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়ামগুলি আপনার গর্ভধারণের প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে। আপনার যাত্রা সুখ ও স্বাস্থ্যসম্মত হোক, এই কামনাই আমাদের।