ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক তেল নির্বাচন করতে পারলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় এবং হৃদযন্ত্রের রোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। সংযত এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে, তেল প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য।
স্বাস্থ্যকর তেলগুলির মধ্যে উচ্চ পরিমাণে মনো-অ্যাশ্চুরেটেড ফ্যাট এবং পলিআ্যাশ্চুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এই তেলগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ তেলগুলি বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি প্রদাহ কমাতে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই তেলগুলি ত্রিপাক্ষিক স্বাস্থ্যসুবিধা সরবরাহ করে, যার মধ্যে রয়েছে: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হৃদযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি কমানো, এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করা।
তেলগুলির মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিএন্টগুলি শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ইনসুলিনের কার্যকারিতা এবং রক্ত সংবহনকে প্রভাবিত করে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে, স্বাস্থ্যকর তেল নির্বাচন খুবই জরুরি।
তেমনি, যখন আমরা খাদ্যাভ্যাসে তেল অন্তর্ভুক্ত করি, তখন তা পরিমাপে নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক তেল নির্বাচন করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজতর হয় এবং ডায়াবেটিস এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধে আসছে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। তাই, ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর তেল নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
সূর্যমুখীর তেল
🔎︎ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তেল হতে পারে এক উল্লেখযোগ্য বিকল্প। এই তেলে উচ্চমাত্রায় পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFAs) এবং ভিটামিন ই উপস্থিত থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য কিছু উপকারী দিক প্রস্তাব করে। PUFAs শরীরের ইনফ্ল্যামেশন হ্রাস করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে।
সূর্যমুখীর তেলে বিদ্যমান ভিটামিন ই উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টির কাজ করে, যা শরীরের কোষগুলোকে মুক্ত রাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে এবং ডায়াবেটিসে সৃষ্ট জটিলতা হ্রাস করতে সহায়তা করে। তবে, পুষ্টিবিদরা এই তেল ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন। প্রথমত, এই তেলের অত্যধিক প্রয়োগ শরীরে অতিরিক্ত ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা কিছুক্ষেত্রে ইনফ্ল্যামেশন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। সুতরাং, ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
এছাড়া, সূর্যমুখীর তেল দিয়ে রান্না করার সময় উচ্চতাপ এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতেতে এর ফ্যাটি অ্যাসিড প্রোফাইল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ট্রান্স ফ্যাট হিসেবে পরিণত হতে পারে। ট্রান্স ফ্যাট ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি উপাদান।
ডায়াবেটিসের দূরাগে সূর্যমুখীর তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করতে উৎসাহী ডায়াবেটিক রোগীরা সূর্যমুখীর তেল পুষ্টিসমৃদ্ধ পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, তবে একটি সুষম ডায়েটের অংশ হিসেবে।
অলিভ তেল (জলপাই তেল)
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রেক্ষিতে অলিভ তেল বা জলপাই তেল হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে বিদ্যমান মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (MUFAs) ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
MUFAs বা মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তের খারাপ কলেস্টেরল (LDL) কমাতে ভূমিকা পালন করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি সাধারণের তুলনায় বেশি থাকে। সুতরাং, অলিভ তেল ব্যবহারে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধিপায়।
অলিভ তেলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে প্রদাহ সাধারণ সমস্যা। অলিভ তেলে পলিফেনল্স ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকায় তা প্রদাহ কমাতে কার্যকর। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অলিভ তেলের নিয়মিত ব্যবহারে প্রদাহজনিত জটিলতাগুলি হ্রাস পেতে পারে।
গবেষণায় আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, অলিভ তেলে এরিউকিক অ্যাসিডের উপস্থিতি দেহের ইনস্যুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে, যা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটির নিয়মিত ব্যবহারে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনস্যুলিনের প্রয়োজনীয় মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
অলিভ তেল খাওয়ার এক ঠিক পদ্ধতি হচ্ছে তা একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা। স্যালাড ড্রেসিং, সস প্রস্তুতি, পাস্তা, ব্রেড ডিপিং ইত্যাদির ক্ষেত্রে অলিভ তেল ব্যবহার করা যায়। তবে, একে অতিরিক্ত গরম করে রান্না করা উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত তাপে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে।
তাহলে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অলিভ তেল হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর বিকল্প, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
নারিকেল তেল
নারিকেল তেল প্রাচীনকাল থেকে ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ওষধি এবং খাবারে ব্যবহৃত হয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নারিকেল তেল কতটা উপকারী হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। নারিকেল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক হতে পারে। তবে এর মধ্যে থাকা মধ্যশৃঙ্খলা ট্রাইগ্লিসারাইডস বা MCTs এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে।
MCTs হজম করার ক্ষেত্রে অন্যান্য চর্বির তুলনায় দ্রুত এবং সরাসরি লিভারে অবশিষ্ট থাকে এবং দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া কিটোসিস নামে পরিচিত, যা রক্তের শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণের কারণে যৌক্তিকভাবে এর ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারিকেল তেল সামগ্রিক পুষ্টি বাড়ায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ডোজ মেনে চলা জরুরী, কারণ অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। অল্প পরিমাণ নারিকেল তেল ব্যবহার করলে তার পুষ্টিগুণগুলি উপকারে আসবে, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে কলেস্টেরল বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাঝারি এবং সঠিক পরিমাণে নারিকেল তেল ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে তা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ান বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাদ্যাভ্যাসে নারিকেল তেল অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।
সরিষার তেল
সরিষার তেল, বহুকাল ধরেই বাঙালি রান্নায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে এসেছে, শুধু স্বাদ এবং গন্ধের কারণেই নয়, বরং স্বাস্থ্যগুণের জন্যও এটি বিশেষ প্রিয়। সরিষার তেলে প্রচুর সমৃদ্ধ ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই তেল বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
একটি গ্লোবাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহারে দেহে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব দেখা যায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। এই তেলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নানাবিধ শারীরিক ক্ষতিকারক উপাদানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক। নবীন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সরিষার তেলের নিয়মিত ব্যবহার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পার, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
যদিও নানা ধরণের স্বাস্থ্যগুণের পাশাপাশি কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করা দরকার। সরিষার তেল অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে বিষাক্ত হতে পারে, কারণ এতে উপস্থিত ইরুসিক অ্যাসিড অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। তাই, সরিষার তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাঝারি মাত্রা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া, বাজারে নিম্ন মানের সরিষার তেলের ব্যবহারেও স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই সতর্কতার সাথে মান পরীক্ষা করে তেল কিনতে হবে।
সবশেষে, বলা যায় যে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সরিষার তেল একটি উপকারী সঙ্গী হতে পারে, তবে এটি ব্যবহারে পরিমিতি জ্ঞান এবং মানের নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। একটি সুস্থ জীবনযাত্রার অংশ হিসাবে, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের পাশাপাশি সরিষার তেল অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।
তিলের তেল
তিলের তেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। এর মধ্যে থাকা সেসামোলিন এবং সেসামিন যৌগ বিশেষভাবে কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কম্পাউন্ড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে তিলের তেলে তৈরি খাদ্য গ্রহণ করলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিলের তেল বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এতে থাকা ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ক্যালসিয়াম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তিলের তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। বিশেষত, ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, তিলের তেল ব্যবহার করার সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ফ্যাট বা তেলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এটি নিশ্চিত করার জন্য মাপমতো পরিমাণে ব্যবহার করুন। তাছাড়া, তিলের তেলে এলার্জি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই নতুনভাবে ব্যবহার করার আগে পরীক্ষা করে দেখুন। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।
তিলের তেলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি রান্না বা সালাদ ড্রেসিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, যা সাধারনত অন্যান্য রান্নার তেলের তুলনায় কম বিশুদ্ধ শিল্পকৌশল প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হয়। এ মানে এটি তাজা এবং স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ যা প্রাকৃতিক ফর্মে থাকে।
অতএব, তিলের তেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অনেক উপকার করে। তবে, এটি ব্যবহার করার আগে সঠিক পরিমাণ এবং এলার্জি পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু মিলিয়ে, এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকর ও স্বাস্থ্যকর উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
অন্যান্য তেল: গ্রীপসিড, অ্যাভোকাডো, এবং ফ্ল্যাক্সসিড তেল
গ্রীপসিড তেল, অ্যাভোকাডো তেল এবং ফ্ল্যাক্সসিড তেলের পুষ্টিমান ও স্বাস্থ্যপ্রদ উপাদানগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেকটা সহায়ক হতে পারে। এই পুষ্টিকর তেলগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
প্রথমে, গ্রীপসিড তেল দেখতে আসা যাক। গ্রীপসিড তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ গ্রীপসিড তেল এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এই প্রাকৃতিক তেলটির একটি হালকা স্বাদ রয়েছে, যা এটি সালাদ ড্রেসিং বা রান্নার জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
দ্বিতীয়ত, অ্যাভোকাডো তেল নিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক। অ্যাভোকাডো তেল উচ্চ মাত্রার মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (ওমেগা-৯) সমৃদ্ধ, যা রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই-এর ভালো উৎসও যা ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সহায়ক। নানা রান্নার ক্ষেত্রে অ্যাভোকাডো তেল ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষত এর হাই স্মোক পয়েন্ট থাকার কারণে।
শেষে, ফ্ল্যাক্সসিড তেল বা তিসির তেলের কথা আলোচনা করা প্রয়োজন। ফ্ল্যাক্সসিড তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সহায়ক। এই তেলে থাকা ফাইবার শর্করার শোষণে ধীরগতি আনে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। ফ্ল্যাক্সসিড তেল সতেজ খাবার বা সামান্য করি করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
সমাজে বিভিন্ন বিলাসী তেলের পুষ্টিকর দিকগুলো বিবেচনা করে গ্রীপসিড, অ্যাভোকাডো, এবং ফ্ল্যাক্সসিড তেল ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনন্দিন জীবনকে উন্নত করতে পারে। সঠিক তেল নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যের উপর আরও ভালো প্রভাব ফেলা সম্ভব।
কোন তেল সেরা?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী তেল নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রতিটি তেলের তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকের উপর প্রভাব ফেলে। সূর্যমুখী তেল হালকা গন্ধহীন এবং এতে ভিটামিন ই প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা প্রাথমিক অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাসে সহায়ক। অন্যদিকে, অলিভ তেল, যা মনোঅ্যাসিডিক ফ্যাটের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপকারী এবং হার্টের জন্য উপকারী। নারিকেল তেল, যা লরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ, স্বল্প আঁশযুক্ত এবং এন্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, তবে এটিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট উচ্চ হওয়ায় সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
সরিষার তেল, যা ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক এবং ইনফ্ল্যামেশন কমায়। তবে এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও থাকতে পারে, বিশেষভাবে উচ্চ ইরুসিক অ্যাসিডের কারণে।তিলের তেল, যেটিতে সিসামোল এবং সিসামিন থাকে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী সমৃদ্ধ এবং ইনফ্ল্যামেশন প্রতিরোধে সহায়ক। অন্যান্য তেলসমূহ, যেমন রাইস ব্রান তেল বা আলমন্ড তেলও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে যা ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারে আসতে পারে।
সুতরাং, কোন একক তেল সবচেয়ে উপকারী তা বলা কঠিন। স্বাস্থ্যকর একাধিক তেলের মাঝেমধ্যে পরিবর্তন করে ব্যবহার করা এবং একটি সমন্বিত খাদ্যতালিকা রাখা সবচেয়ে ভালো হয়। সুসংহত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে উপরোক্ত তেলগুলির প্রত্যেকটি কোনো না কোনোভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে, তাই একটি ধরনের তেলের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন তেল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সমন্বিত পদ্ধতিতে খাদ্য পরিকল্পনা সহ একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করার মাধ্যমে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং তার প্রভাবগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।