বর্তমানে পাম তেল ভারত বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বব্যাপী রান্না এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য তেলের তুলনায় এর দাম বেশ কিছুটা কম হওয়ায় এর এই বিপুল জনপ্রিয়তা ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পাম তেলের উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ে চিন্তিত, যা নিয়মিত ব্যবহারে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের প্রভাবের কারণে, পাম তেল কোলেস্টেরল লেভেল বৃদ্ধি করতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনকি ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো ক্রনিক রোগের ঝুঁকিও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তেলগুলির মধ্যে পাম তেল একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে কারণ এটি গ্লোবাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে বহুল ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেক, বিস্কুট, এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে এটি প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাম তেলের বিশেষত্ব হল এর স্থায়িত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদী গুণাবলী, যা খাদ্য প্রস্তুতকারীদের কাছে এটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
তবে, এর ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সংস্থা পাম তেলের ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। পাম তেলের উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ এবং এর প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | স্বাস্থ্যের ক্ষতিকারক দিক |
---|---|---|
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৪৯.৩ গ্রাম | হৃদরোগ এবং রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি |
মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৩৭ গ্রাম | সঠিক মাত্রায় উপকারী, অতিরিক্ত গ্রহণে স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে |
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৯.৩ গ্রাম | সঠিক মাত্রায় উপকারী, তবে বেশিরভাগ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের সাথে মিশ্রিত থাকার কারণে সমস্যা |
ভিটামিন ই | ১৫ মিলিগ্রাম | উপকারী, তবে অত্যধিক সেবনে রক্তপাত এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে |
বিটা-ক্যারোটিন | ১ মিলিগ্রাম | উপকারী, তবে অতিরিক্ত সেবনে ত্বকের সমস্যা হতে পারে |
পামিটিক এসিড | ৪৪ গ্রাম | উচ্চ রক্তচাপ, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি |
ওলেয়িক এসিড | ৩৯ গ্রাম | সঠিক মাত্রায় উপকারী, উচ্চ মাত্রায় গ্রহণে ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সমস্যা |
লিনোলিক এসিড | ৯ গ্রাম | উপকারী, তবে সঠিক ব্যালেন্স বজায় রাখতে হবে |
স্টেরলস | ১.১ গ্রাম | সঠিক মাত্রায় উপকারী, তবে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল সমস্যা হতে পারে |
ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস | বিভিন্ন | উপকারী, তবে পাম তেলের প্রক্রিয়াকরণের সময় নষ্ট হতে পারে |
পাম তেলের উৎপত্তি এবং ব্যবহার
পাম তেল পাম গাছের ফল থেকে প্রাপ্ত একটি উদ্ভিজ্জ তেল, যা প্রাথমিকভাবে পশ্চিম আফ্রিকাতে উৎপন্ন হয়। যদিও পাম তেলের উৎপত্তি আফ্রিকাতে, বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত এবং ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে, যেমন ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া। এই দেশগুলি বিশ্বব্যাপী পাম তেল উৎপাদনের প্রায় ৮৫ শতাংশ সরবরাহ করে।
পাম তেলের প্রক্রিয়াকরণ একটি জটিল প্রক্রিয়া যা বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। প্রথমে পাম ফল সংগ্রহ করে তেল নিষ্কাশন করা হয়। তারপর এই তেল শোধন, ব্লিচিং এবং ডিওডোরাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশোধিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে পাম তেল খাদ্যগ্রহণের উপযোগী হয় এবং এটি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী পাম তেলের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। এটি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন মার্জারিন, চকলেট, আইসক্রিম, এবং বিভিন্ন বেকারি পণ্য। এছাড়া, পাম তেল কসমেটিক্স এবং পার্সোনাল কেয়ার পণ্য, যেমন সাবান এবং শ্যাম্পুতেও ব্যবহৃত হয়। শিল্পক্ষেত্রেও পাম তেলের ব্যবহার রয়েছে, যেমন বায়োফুয়েল উৎপাদনে।
পাম তেলের উচ্চ উৎপাদন এবং ব্যবহার বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে এর পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব নিয়ে। তবে, খাদ্য এবং অ-খাদ্য পণ্য উভয় ক্ষেত্রেই পাম তেলের বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এটি একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে।
পাম তেলের পুষ্টিগুণ ও উপাদান
পাম তেল একটি বহুল ব্যবহৃত ভোজ্য তেল যা পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন উপাদানের কারণে বিশেষভাবে পরিচিত। পাম তেলের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট উল্লেখযোগ্য। এই উপাদানগুলো মানব স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে, তাই তাদের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাম তেলের একটি প্রধান উপাদান। এই ফ্যাট তেলের প্রায় ৫০% অংশ জুড়ে থাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে, এটি ক্যালোরির একটি সমৃদ্ধ উৎস হিসাবেও বিবেচিত হয়, যা শরীরের শক্তি সরবরাহে ভূমিকা রাখে।
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাম তেলের প্রায় ৩৭%-৪০% অংশ গঠন করে। এই ধরনের ফ্যাট শরীরের জন্য অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর এবং এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাম তেলের অন্য একটি উপাদান, যা প্রায় ১০%-১৫% অংশ গঠন করে। এই ফ্যাট শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ওমেগা-৬ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা সেল মেমব্রেনের গঠন এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রদাহ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখে।
পাম তেলে বিভিন্ন ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও পাওয়া যায়, যেমন ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিনয়েড। এগুলো শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করতে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: হৃদরোগ
পাম তেল স্বাস্থ্যের উপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে হৃদরোগের ক্ষেত্রে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে পাম তেলে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা 🔎︎ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক। কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে পাম তেলের স্যাচুরেটেড ফ্যাট হার্টের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে, যা ধমনীতে প্লাক তৈরি করে। এই প্লাক ধমনী সংকুচিত করে, ফলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত পাম তেল গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, এই গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে পাম তেল থেকে প্রাপ্ত পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, তবে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের প্রভাব বেশি ক্ষতিকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) উভয়ই পরামর্শ দিয়েছেন যে, স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কমানো উচিত এবং তার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করা উচিত। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে পাম তেলের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার পরামর্শও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অতএব, পাম তেলের উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই ঝুঁকি কমাতে, পাম তেলের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উৎস বেছে নেওয়া শ্রেয়।
ডায়াবেটিস এবং পাম তেল
পাম তেল, যা মূলত আফ্রিকান তেলের তাল ফল থেকে প্রাপ্ত, উচ্চ ক্যালোরি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের একটি প্রধান উৎস। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই তেলটি কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তা বুঝতে গেলে এর পুষ্টিগুণ এবং শারীরিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
প্রথমেই, পাম তেল উচ্চ ক্যালোরির উৎস হওয়ায়, এটি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখাকে আরও কঠিন করে তোলে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পাম তেল ব্যবহার করলে, রক্তে শর্করার মাত্রায় অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্ষতিকর।
পাম তেলের স্যাচুরেটেড ফ্যাট উচ্চমাত্রায় থাকার কারণে, এটি ইন্সুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। ইন্সুলিন হরমোনটি রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে কোষে নিয়ে গিয়ে শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের অতিরিক্ত গ্রহণ ইন্সুলিনের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে, যা ইনসুলিন প্রতিরোধের সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রতিরোধ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।
এছাড়াও, পাম তেল ব্যবহারে প্রদাহজনিত সমস্যার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। প্রদাহ ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কিত অনেক জটিলতার কারণ হতে পারে, যেমন হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা এবং স্নায়ুর ক্ষতি। সুতরাং, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পাম তেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় পাম তেলের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উৎস যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম তেল, বা অ্যাভোকাডো তেল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই তেলগুলি কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং উচ্চ পরিমাণে অসম্পৃক্ত ফ্যাট সরবরাহ করে, যা শরীরের জন্য আরও উপকারী।
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা
পাম তেলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। পাম তেল একটি উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন খাদ্য উপাদান, যা প্রতিদিনের ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এক টেবিল চামচ পাম তেল প্রায় ১২০ ক্যালোরি সরবরাহ করে, যা অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও, পাম তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উপস্থিতি থাকে, যা শরীরের ফ্যাট জমা বৃদ্ধি করে তূলনামূলকভাবে দ্রুত।
স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজনের মধ্যে একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। পাম তেলের ফ্যাট এবং ক্যালোরি সহজেই শরীরে সঞ্চিত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ওজন বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে। স্থূলতা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য মেটাবোলিক ডিসঅর্ডার।
যদিও পাম তেল স্বাভাবিক খাদ্যতালিকায় ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাম তেলের ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান, যেমন অলিভ অয়েল বা ক্যানোলা অয়েল, ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সুষম খাদ্যতালিকা এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ অপরিহার্য। পাম তেলের পরিবর্তে কম ফ্যাট এবং ক্যালোরি সম্পন্ন খাদ্য উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এইভাবে, পাম তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো যায় এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করা সম্ভব।
বিকল্প তেল এবং পুষ্টিকর বিকল্প
পাম তেলের বিপরীতে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর তেল রয়েছে যা বিভিন্ন পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। এই তেলগুলো না শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর বরং স্বাদেও অনবদ্য।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল, বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, একটি উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন তেল যা মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ। এই তেলটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস। এটি ভিটামিন ই এবং কে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস যা ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
নারকেল তেল: নারকেল তেল একটি বিপাক বাড়িয়ে দেয় এমন তেল যা শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এতে মিডিয়াম-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস (এমসিটিস) রয়েছে যা দ্রুত শক্তি প্রদান করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এছাড়াও, এটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রোপার্টিজ সমৃদ্ধ, যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
সয়াবিন তেল: সয়াবিন তেল ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন ই এর একটি ভালো উৎস যা শরীরের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। সয়াবিন তেল প্রোটিনের একটি ভালো উৎস যা শরীরের মাংসপেশি গঠনে সহায়ক।
এছাড়াও, সূর্যমুখী তেল, অ্যাভোকাডো তেল, এবং ফ্ল্যাক্সসিড তেলও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। সূর্যমুখী তেল ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। অ্যাভোকাডো তেল হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ফ্ল্যাক্সসিড তেল ওমেগা-৩ এর উচ্চ উৎস যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এই তেলগুলো পাম তেলের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। সঠিক তেল নির্বাচন স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই তেলগুলো দৈনন্দিন রান্নায় ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্যগুলির ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে পাম তেলের ব্যবহার কিছু ঝুঁকি বহন করে। যদিও এটি পুষ্টির একটি প্রধান উৎস হতে পারে, তবে এর অতিরিক্ত এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার হৃদরোগ, স্থূলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে তেলের উচ্চ পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কম পরিমাণে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এই ঝুঁকিগুলি বিবেচনায় রেখে, একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। প্রথমত, খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য আনতে হবে। অন্যান্য স্বাস্থ্যকর তেল যেমন অলিভ অয়েল, কানোলা অয়েল বা সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। এই তেলের মধ্যে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কম, যা হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
দ্বিতীয়ত, খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পাম তেল দিয়ে তৈরি খাবারগুলি মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে, তবে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়। এছাড়াও, খাদ্য প্রস্তুত করার সময় তেলের পরিমাণ কমানো যেতে পারে।
তৃতীয়ত, খাদ্য প্যাকেজিং পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। বাজারে অনেক প্যাকেটজাত খাবারে পাম তেল ব্যবহার করা হয়, তাই কেনার আগে প্যাকেজিংয়ের উপর উল্লিখিত উপাদানগুলি ভালোভাবে যাচাই করা প্রয়োজন।
সর্বোপরি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখতে ব্যালান্সড ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। পাম তেলের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি চেষ্টা করা সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।