কোয়েল পাখির ডিম ছোট আকারের হলেও এর পুষ্টিগুণ অতি সমৃদ্ধ। বহুকাল ধরেই কোয়েল পাখির ডিম বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় , বিশেষ করে জাপান, কোরিয়া, চীন এবং ফ্রান্সের মতো দেশে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ডিমের পুষ্টিগুণের কারণে এটি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে , ভারত বা বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে এই ডিম তাই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
কোয়েল পাখির ডিমের বিশেষত্ব হলো এটি আকারে ছোট হলেও পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি১২ এবং ই রয়েছে। এছাড়াও, এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন আয়রন, ফসফরাস, এবং সেলেনিয়াম। এই সকল পুষ্টি উপাদান একত্রিত হয়ে কোয়েল পাখির ডিমকে একটি শক্তিশালী পুষ্টির উৎসে পরিণত করেছে।
কোয়েল পাখির ডিমের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের জন্য এটি বিভিন্ন প্রকারের রেসিপিতে ব্যবহার করা হয়। স্যালাড, স্যান্ডউইচ, সুপ এবং অন্যান্য খাদ্য-দ্রব্যে ব্যবহৃত হয়, যা খাদ্যকে আরও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর করে তোলে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কোয়েল পাখির ডিম অনেকেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। এর পুষ্টিগুণ এবং সহজলভ্যতার কারণে এই ডিমটি বিশেষভাবে শিশু, বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়াও, কোয়েল পাখির ডিমের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি সহজেই হজম হয় এবং অ্যালার্জির ঝুঁকি কম। তাই, এটি খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর।
কোয়েল পাখির ডিমে থাকা পুষ্টি উপাদান
কোয়েল পাখির ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে, যা শরীরের সমগ্র পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েল পাখির ডিমে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এই প্রোটিন আমাদের শরীরের কোষ গঠনে এবং মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন এ, বি৬, বি১২, ডি এবং ই সমৃদ্ধ। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এটি রেটিনার কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। ভিটামিন বি৬ এবং বি১২ স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা এবং রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্য এবং ক্যালসিয়ামের শোষণে সহায়ক। ভিটামিন ই একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষকে মুক্ত রেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
এছাড়াও, কোয়েল পাখির ডিমে গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলস যেমন আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়ক, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে। পটাশিয়াম হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। জিঙ্ক শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশির শক্তি এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | স্বাস্থ্যগুরুত্ব |
---|---|---|
প্রোটিন | ১৩ গ্রাম | পেশী গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে। |
ফ্যাট | ১১ গ্রাম | হরমোন উৎপাদন ও ভিটামিন শোষণে সাহায্য করে। |
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড | উল্লেখযোগ্য | হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা ও প্রদাহ হ্রাস করে। |
ভিটামিন B1 (থায়ামিন) | ০.৪৭ মিলিগ্রাম | কার্বোহাইড্রেটকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। |
ভিটামিন B2 (রিবোফ্লাভিন) | ০.৮০ মিলিগ্রাম | চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে ও কোষের বৃদ্ধি ও মেরামতে সাহায্য করে। |
ভিটামিন A | ৪৫৩ IU | চোখের স্বাস্থ্য, ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। |
ভিটামিন E | ০.৯০ মিলিগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। |
ভিটামিন D | ১.৪ মিলিগ্রাম | হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে ও ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। |
ভিটামিন B6 (পাইরিডক্সিন) | ০.১৪৩ মিলিগ্রাম | প্রোটিন বিপাক এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য জরুরি। |
ভিটামিন B12 (কোবালামিন) | ১.৫৮ মিলিগ্রাম | লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন ও স্নায়ু কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। |
আয়রন | ৩.৬৫ মিলিগ্রাম | রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে ও অক্সিজেন পরিবহন করে। |
ফসফরাস | ২২৬ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে। |
ক্যালসিয়াম | ৬৪ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। |
পটাশিয়াম | ১৩২ মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। |
ম্যাগনেসিয়াম | ১২ মিলিগ্রাম | পেশী ও স্নায়ু কার্যকারিতা, হৃদয়ের স্বাস্থ্য এবং হাড়ের গঠন রক্ষা করে। |
জিঙ্ক | ১.৪৭ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি এবং কোষের বৃদ্ধি ও মেরামতে সাহায্য করে। |
সেলেনিয়াম | ৩২.৫ মাইক্রোগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম কার্যকারিতা ও থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। |
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের অন্যতম প্রধান উপকারিতা হলো এর হার্টের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব। এই ডিমে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) থাকে যা হার্টের জন্য বেশ উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করার জন্য পরিচিত, কারণ এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
কোয়েল পাখির ডিমে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি রক্তনালীকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে, যা রক্তপ্রবাহকে সহজ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও, এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই ডিমে থাকা ভালো 🔎︎ কোলেস্টেরল (এইচডিএল)। এইচডিএল কোলেস্টেরল হার্টের ধমনীতে জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) অপসারণে সহায়ক। এর ফলে ধমনী দ্রুত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি, কোয়েল পাখির ডিম রক্তের সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। এতে করে শরীরের প্রতিটি অংশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায়, যা সার্বিকভাবে হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
সব মিলিয়ে, কোয়েল পাখির ডিম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। এর মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভালো কোলেস্টেরল হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং, যারা হার্টের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন, তাদের খাদ্যাভ্যাসে কোয়েল পাখির ডিম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কোয়েল পাখির ডিম
কোয়েল পাখির ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর মুক্ত মৌলগুলোকে নিরপেক্ষ করে, যা কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।
ভিটামিন সি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এটি সাদা রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কোয়েল পাখির ডিমে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সংমিশ্রণ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, কোয়েল পাখির ডিমে থাকা ভিটামিন এ এবং ই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন এ শরীরের মিউকাস মেমব্রেনগুলিকে সুস্থ রাখে, যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ রোধ করে। ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
তাই, কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোয়েল পাখির ডিমের এই পুষ্টিগত গুণাবলি শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কোয়েল পাখির ডিম
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে, কোয়েল পাখির ডিম অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা শিশুদের শরীরের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং তাদের শক্তি যোগায়। প্রোটিন শিশুদের সঠিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি পেশী ও কোষের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও, কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, যা শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক। ভিটামিন বি১২ এবং আয়রন শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং তাদের শিখন ক্ষমতা উন্নত করে। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহয়ক, যা শিশুরা স্কুলে পড়াশোনা করার সময় সুস্থ দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখির ডিমে আরও রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুদের স্মরণশক্তি উন্নত করে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, এই ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
অন্যদিকে, কোয়েল পাখির ডিমের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি সহজে হজমযোগ্য। শিশুদের হজম প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দুর্বল হওয়ায়, কোয়েল পাখির ডিম তাদের জন্য উপযুক্ত একটি খাবার। এটি শিশুদের পেটের সমস্যা কমায় এবং পুষ্টি শোষণ প্রক্রিয়া উন্নত করে।
সব মিলিয়ে, কোয়েল পাখির ডিম শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শিশুদের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়তা করে এবং তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য খাদ্য উপাদান হতে পারে।
ডিমের অ্যালার্জি এবং কোয়েল পাখির ডিম
অনেক মানুষ মুরগির ডিমে অ্যালার্জি আক্রান্ত হতে পারেন, যা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং খাদ্য সীমাবদ্ধতা হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরনের অ্যালার্জির ফলে শরীরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট, এমনকি এনাফাইল্যাক্সিস। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিম হতে পারে এক্ষেত্রে একটি কার্যকর বিকল্প।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়েল পাখির ডিমে প্রোটিনের গঠন মুরগির ডিমের তুলনায় ভিন্ন, যা অনেক ক্ষেত্রে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমিয়ে দেয়। কোয়েল পাখির ডিমে ওভোমুকোইড নামক প্রোটিনের পরিমাণ খুবই কম, যা মুরগির ডিমে বেশি পরিমাণে থাকে এবং প্রধানত অ্যালার্জির উৎস। এই কারণে অনেক অ্যালার্জি আক্রান্ত ব্যক্তি কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়াই।
এছাড়াও, কোয়েল পাখির ডিমে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলি অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। কোয়েল পাখির ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি২, বি১২, এবং সেলেনিয়াম রয়েছে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
অতএব, যারা মুরগির ডিমে অ্যালার্জি আক্রান্ত, তারা কোয়েল পাখির ডিমকে তাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তবে এটি করার পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কারণ অ্যালার্জি একটি জটিল বিষয় এবং প্রতিটি ব্যক্তির শরীরের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।
উপসংহারে, কোয়েল পাখির ডিম মুরগির ডিমের অ্যালার্জি আক্রান্তদের জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। সঠিক জ্ঞান এবং পরামর্শের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করলে শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কোয়েল পাখির ডিমের ভূমিকা
কোয়েল পাখির ডিম ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ডিমে ক্যালোরির পরিমাণ কম হলেও প্রোটিনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। প্রতিটি কোয়েল পাখির ডিমে প্রায় ১৪ ক্যালোরি থাকে যা অন্যান্য ডিমের তুলনায় কম। ফলে, যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
উচ্চ প্রোটিন থাকার কারণে কোয়েল পাখির ডিম খেলে পেট ভরে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে, ফলে অযথা খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে আসে। প্রোটিন মেটাবলিজমকে উন্নত করে যা শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে ওজন কমানো সহজ হয় কারণ এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোয়েল পাখির ডিমে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এতে থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া, এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়স কমাতে এবং ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখির ডিমের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর সহজ পাচ্যতা। এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি সহজে শরীরে শোষিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি প্রদান করে। এজন্য এটি শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সহায়ক। কোয়েল পাখির ডিম খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়।
সুতরাং, কোয়েল পাখির ডিম কেবল ওজন নিয়ন্ত্রণে নয়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং মেটাবলিজম উন্নত করতে সহায়ক। এটি আপনার দৈনিক ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব।
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ
কোয়েল পাখির ডিমের অসাধারণ পুষ্টিগুণের কারণে এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ডিমগুলো রান্না করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যা সহজে এবং সুস্বাদু করে প্রস্তুত করা যায়। কোয়েল পাখির ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া একটি প্রচলিত পদ্ধতি। এটি সিদ্ধ করতে সাধারণত ৩-৫ মিনিট সময় লাগে। এছাড়া এগুলোকে ওমলেট, স্ক্র্যাম্বলড, বা স্যালাডের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
কোয়েল পাখির ডিম সংরক্ষণ করা খুবই সহজ। এগুলো সাধারণত ফ্রিজে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। ডিমের তাজা অবস্থার জন্য ফ্রিজের শীতল স্থানে রাখা উচিত এবং ব্যবহারের আগে ডিমগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
ডায়েটে কোয়েল পাখির ডিম অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ২-৩টি কোয়েল পাখির ডিম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তবে যেসব ব্যক্তির ডিমে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই ডিমগুলো প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে যা শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক।
অনেকেই কোয়েল পাখির ডিম কাঁচা খেয়ে থাকেন, তবে তা না করার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এতে সালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সবসময় ভালোভাবে রান্না করা ডিম খাওয়া উচিত। কোয়েল পাখির ডিমের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ করলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।