আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্রে তেঁতুলের বীজের ব্যবহার বহু যুগ ধরে চলে আসছে। এই দুটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রাকৃতিক উপাদানগুলির উপর নির্ভর করে এবং তেঁতুলের বীজকে যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, তেঁতুলের বীজ বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক গুণাবলী বহন করে যা শরীরের পুষ্টি সরবরাহ করতে সক্ষম। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে তেঁতুলের বীজ থেকে তৈরি বিভিন্ন ওষুধের বিবরণ পাওয়া যায়, যেগুলি যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর।
ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্রেও তেঁতুলের বীজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই শাস্ত্রে তেঁতুলের বীজকে যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য এবং ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউনানি চিকিৎসা মতে, তেঁতুলের বীজের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি শরীরে শক্তি এবং স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এছাড়াও, এটি যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রশংসিত উপাদান হিসেবে পরিচিত।
তেঁতুলের বীজের প্রাচীন কালের এই ব্যবহারের পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। তেঁতুলের বীজে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলি শরীরে যৌন হরমোনের স্তরকে উন্নত করতে সহায়তা করে। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে পারে যা যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এছাড়াও, তেঁতুলের বীজে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।
প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে তেঁতুলের বীজের ব্যবহারের এই দীর্ঘ ইতিহাস প্রমাণ করে যে, এটি যৌন শক্তি বৃদ্ধির একটি কার্যকর উপাদান। এই প্রাকৃতিক উপাদানটি যুগ যুগ ধরে প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে একটি নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তেঁতুলের বীজের পুষ্টিগুণ ও রাসায়নিক উপাদান
তেঁতুলের বীজে থাকা পুষ্টি উপাদান এবং রাসায়নিক উপাদানগুলো যৌন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তেঁতুলের বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট থাকে যা শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং মিনারেল যা শরীরের নানা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে সহায়ক।
তেঁতুলের বীজে প্রচুর পরিমাণে 🔎︎ ভিটামিন সি রয়েছে যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়ক। তেঁতুলের বীজে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও পাওয়া যায় যা যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।
মিনারেলের মধ্যে তেঁতুলের বীজে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন। পটাশিয়াম শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্রমকে উন্নত করে। ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। আয়রন শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক, যা রক্ত সঞ্চালন এবং যৌন সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।
তেঁতুলের বীজে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড যেমন লিউসিন, আইসোলিউসিন এবং ভ্যালিন শরীরের পেশী তৈরি এবং মেরামত করতে সাহায্য করে। এভাবে তেঁতুলের বীজ যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | স্বাস্থ্য উপকারিতা | যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা |
---|---|---|---|
প্রোটিন | ১৩-১৮ গ্রাম | পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরের কোষ মেরামত করে | শারীরিক শক্তি এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করে |
শর্করা | ৬০-৬৫ গ্রাম | শক্তি সরবরাহ করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় | শক্তি বৃদ্ধি করে |
ফ্যাট | ২-৪ গ্রাম | শক্তি উৎস এবং কোষের গঠন বজায় রাখে | শরীরে শক্তির যোগান দেয় |
ফাইবার | ২০ গ্রাম | হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে | হজমশক্তি উন্নত করে |
ক্যালসিয়াম | ১৭০ মিলিগ্রাম | হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখে | শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৫০ মিলিগ্রাম | পেশীর কার্যকারিতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে | স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে |
ফসফরাস | ১১ গ্রাম | হাড় এবং দাঁতের গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে | শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে |
পটাসিয়াম | ১২০ মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে | রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং যৌনস্বাস্থ্য উন্নত করে |
সোডিয়াম | ২৪ মিলিগ্রাম | শরীরের জলীয় ভারসাম্য রক্ষা করে | শারীরিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখে |
ভিটামিন সি | ৩ মিলিগ্রাম | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে |
আয়রন | ১০ মিলিগ্রাম | রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে | রক্তসঞ্চালন উন্নত করে |
জিঙ্ক | ৩ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে এবং সেল মেটাবলিজমে সাহায্য করে | টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে এবং যৌনস্বাস্থ্য উন্নত করে |
কপার | ০.২৪ মিলিগ্রাম | লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়ক এবং স্নায়ু সুস্থ রাখে | স্নায়ুর স্বাস্থ্য বজায় রাখে |
ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন) | ০.২ মিলিগ্রাম | কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমে সাহায্য করে এবং নার্ভ ফাংশন বজায় রাখে | শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে |
ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) | ০.১৫ মিলিগ্রাম | কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং এনার্জি উৎপাদনে সাহায্য করে | শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে |
ফোলেট | ১৪ মাইক্রোগ্রাম | সেল রিনিউয়ালে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে | সেল রিনিউয়ালে সহায়তা করে |
সেলেনিয়াম | ০.০৪ মিলিগ্রাম | এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় | যৌনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
পলিফেনল | ২০-২৫ মিলিগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক | যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
ফ্ল্যাভোনয়েডস | ১৫-২০ মিলিগ্রাম | প্রদাহ কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে | যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
ট্যানিন | ১০-১৫ মিলিগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত | যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
সাপোনিন | ৫-১০ মিলিগ্রাম | কোলেস্টেরল কমায়, ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে, এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক | যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
ফাইটেট | ৫-১০ মিলিগ্রাম | খনিজ শোষণে সহায়তা করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক | যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
অ্যালকালয়েডস | ২-৫ মিলিগ্রাম | প্রদাহ কমায় এবং ব্যথা নিবারণে সহায়ক | যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
স্টেরয়েডস | ১-৩ মিলিগ্রাম | হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং প্রদাহ কমায় | যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় |
তেঁতুলের বীজের যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা
তেঁতুলের বীজ যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে তেঁতুলের বীজে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো পুরুষদের মধ্যে যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এই বীজে উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যাল যৌন হরমোনের নির্গমন বৃদ্ধি করে এবং রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে, যা যৌন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
তেঁতুলের বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের ক্ষতিকর মুক্ত মৌলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এছাড়া, তেঁতুলের বীজে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড যৌন হরমোনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে তেঁতুলের বীজে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অ্যামিনো অ্যাসিডগুলো শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন গঠনে সহায়ক, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। প্রোটিন যৌন শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
তেঁতুলের বীজের নিয়মিত ব্যবহারে শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা পুরুষদের যৌন ইচ্ছা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। তেঁতুলের বীজের কার্যক্ষমতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধেও এটি ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধগুলো যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
তেঁতুলের বীজের ব্যবহারবিধি
তেঁতুলের বীজ বিভিন্ন ধরণের ফর্মে ব্যবহার করা যায়, যেমন গুঁড়া, পেস্ট, বা তেল। প্রতিটি ফর্মে তেঁতুলের বীজের ব্যবহারবিধি এবং উপকারিতা ভিন্ন হতে পারে। তেঁতুলের বীজ গুঁড়া হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে বীজগুলোকে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর শুকানো বীজগুলোকে পেষণ করে গুঁড়া তৈরী করা হয়। এই গুঁড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
তেঁতুলের বীজ পেস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে বীজগুলোকে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর ভেজানো বীজগুলোকে পেষণ করে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরী করতে হয়। এই পেস্ট শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করলে তা যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে, তেঁতুলের বীজের পেস্ট ত্বকের জন্যও উপকারী হতে পারে, কারণ এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
তেঁতুলের বীজ তেলের আকারে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে বীজগুলো থেকে তেল বের করে নিতে হয়। এই তেল শরীরে মেসেজ করার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটি যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। তেঁতুলের বীজ তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে পেশী শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, যা যৌন সক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তেঁতুলের বীজের এই বিভিন্ন ফর্মের ব্যবহার কেবলমাত্র যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে সঠিক ডোজ এবং পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়।
তেঁতুলের বীজ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
তেঁতুলের বীজের ব্যবহারে কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদিও প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে তেঁতুলের বীজ সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা তৈরি হতে পারে।
প্রথমত, তেঁতুলের বীজের অতিরিক্ত ব্যবহারে হজম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া হতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে, তেঁতুলের বীজের পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত এবং রোজকার খাদ্যতালিকায় ধীরে ধীরে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, তেঁতুলের বীজের ব্যবহারে অ্যালার্জি হতে পারে। তেঁতুল বা তেঁতুলের বীজের প্রতি কোন ব্যক্তির সংবেদনশীলতা থাকলে, তার ত্বকে র্যাশ, চুলকানি, বা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ব্যবহার বন্ধ করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তৃতীয়ত, তেঁতুলের বীজের ব্যবহারে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যাদের রক্তচাপ কম থাকে বা যারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবন করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
তেঁতুলের বীজ ব্যবহার করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। প্রথমত, গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের তেঁতুলের বীজ ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, যাদের কোনও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, যেমন কিডনি সমস্যা বা লিভার ডিজিজ, তাদের ক্ষেত্রেও তেঁতুলের বীজ ব্যবহার করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।
তেঁতুলের বীজ ব্যবহারের সময় সঠিক মাত্রা ও নিয়মাবলী মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক মাত্রায় ব্যবহারে তেঁতুলের বীজ বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করতে পারে, তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রাকৃতিক যৌন স্বাস্থ্যের অন্যান্য উপাদান
তেঁতুলের বীজ ছাড়াও বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে আসে অশ্বগন্ধা, যা একটি প্রাচীন ভেষজ এবং আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। অশ্বগন্ধার মূল বৈশিষ্ট্য হল এটি শরীরের স্ট্রেস কমায় এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়, যা যৌন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
এরপর আসে শিলাজিত, যা হিমালয় পর্বতমালার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। শিলাজিতের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক মিনারেল এবং ফালভোনয়েডস, যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌন ক্ষমতা উন্নত করতে সক্ষম। শিলাজিত নিয়মিত সেবনে পুরুষদের মধ্যে যৌন শক্তি ও স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পায়।
মধু একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য এবং যৌন স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে অতি পরিচিত। মধুর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং যৌন ইচ্ছা বাড়ায়। নিয়মিত মধু সেবনে শরীরের সাধারণ স্বাস্থ্যও উন্নত হয়।
জিনসেং, বিশেষ করে কোরিয়ান রেড জিনসেং, যৌন স্বাস্থ্যের জন্য একটি শক্তিশালী উপাদান। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং এনার্জি লেভেল বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, জিনসেং ব্যবহারকারীদের মধ্যে যৌন ইচ্ছা এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
লবঙ্গও যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিচিত একটি প্রাকৃতিক উপাদান। লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে ইউজেনল নামক একটি যৌগ, যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং যৌন উত্তেজনা বাড়ায়।
উল্লেখিত প্রাকৃতিক উপাদানগুলো নিয়মিত সেবনে যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে এবং উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলীর সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া সম্ভব।
তেঁতুলের বীজের যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে গবেষক ও চিকিৎসকরা বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে তেঁতুলের বীজের নির্যাসে থাকা পুষ্টিগুণগুলি পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে তেঁতুলের বীজে উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যালগুলি যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে তেঁতুলের বীজের নিয়মিত সেবন পুরুষদের রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে, যা যৌন স্থিতিশীলতায় সহায়ক। এছাড়াও, তেঁতুলের বীজে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট সেলুলার স্তরে কাজ করে, যা শারীরিক শক্তি ও যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেঁতুলের বীজের সেবন সাধারণত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না এবং এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে, যেকোনো নতুন খাদ্য উপাদান গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। কিছু ক্ষেত্রে, তেঁতুলের বীজের অতিরিক্ত সেবন শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতাও তেঁতুলের বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ইতিবাচক। তারা জানান যে তেঁতুলের বীজে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলগুলি শুধু যৌন সক্ষমতাই নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তেঁতুলের বীজ নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসকদের মতামত যৌন স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এর কার্যকরিতা প্রমাণ করে। তবে, এটি কোনো চমৎকারি ওষুধ নয়, তাই সুস্থ জীবনযাপনের অংশ হিসেবে তেঁতুলের বীজের সেবন করা গুরুত্বপূর্ণ।