সজনে বহুল ব্যবহৃত উদ্ভিদ যা ভারত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera এবং এটি মূলত একটি দ্রুতবর্ধনশীল, পত্রঝরা গাছ। সজনে গাছের পাতা, বীজ, ফুল এবং শিকড় সবই পুষ্টিগুণে ভরপুর, তবে পাতাগুলি বিশেষভাবে পুষ্টিকর।
সজনে পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং ই, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং প্রোটিন রয়েছে। এই পাতাগুলি উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের উৎস, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকাল নিঃসরণে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও, সজনে পাতায় থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ঐতিহাসিকভাবে সজনে পাতার ব্যবহার বহু প্রাচীন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় সজনে পাতার ব্যবহার ছিলো ব্যাপক। এটি প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে অন্ত্রের স্বাস্থ্য, হজমের সমস্যা, এবং বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে আধুনিক গবেষণায়ও সজনে পাতার এই বহুমুখী উপকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সজনে পাতা সহজেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এটি রান্না করা যায়, সূপে মিশিয়ে খাওয়া যায়, কিংবা গুঁড়া করে বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহার করা যায়। সজনে পাতার গুঁড়া স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি করতেও ব্যবহার করা হয়। এই পাতা দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত সহজ এবং এর স্বাস্থ্যগুণ অবহেলার যোগ্য নয়।
হার্টের স্বাস্থ্যে সজনে পাতার গুড়ার ভূমিকা
সজনে পাতার গুড়া হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর প্রধান কারণ হলো এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি হার্টের টিস্যুতে ফ্রি র্যাডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে, যা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও, 🔎︎সজনে পাতার গুড়ার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ হার্টের আর্টারিতে ইনফ্লেমেশন কমাতে সহায়ক। ইনফ্লেমেশন হল হার্টের রোগের একটি প্রধান কারণ, যা আর্টারির ভেতরে প্লাক গঠনের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সজনে পাতার গুড়া নিয়মিত সেবনে এই ইনফ্লেমেশন কমে যায়, ফলে হার্টের আর্টারি সুস্থ থাকে।
সজনে পাতার গুড়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুণ হলো এটি কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা। উচ্চ কোলেস্টেরল লেভেল হার্টের রোগের প্রধান কারণ। সজনে পাতায় থাকা বিভিন্ন ফাইবার এবং ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সহায়ক। নিয়মিত সজনে পাতার গুড়া সেবনে রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরল কমে যায় এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
অন্যদিকে, সজনে পাতার গুড়ায় থাকা পটাশিয়াম হার্টের ফাংশন উন্নত করতে সহায়ক। পটাশিয়াম হার্টের পেশির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এতে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে এবং হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অতএব, সজনে পাতার গুড়া হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপাদান। নিয়মিত সজনে পাতার গুড়া সেবনে হার্টের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং হার্টের সার্বিক কার্যক্ষমতা উন্নত করা যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতার গুড়া
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে পাতার গুড়া একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। সজনে পাতায় রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত সজনে পাতার গুড়া গ্রহণ করলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
সজনে পাতার গুড়া ব্যবহার করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। প্রাথমিকভাবে, এটি ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমায়। ইনসুলিন রেজিস্টেন্স হলে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। সজনে পাতার গুড়ায় থাকা পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমাতে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সজনে পাতার গুড়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে পাতার গুড়া শরীরের গ্লুকোজ মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি প্যাংক্রিয়াসের ইনসুলিন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
সজনে পাতার গুড়ার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইনফ্লেমেশন কমাতে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ইনফ্লেমেশন কমাতে পারলে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সজনে পাতার গুড়া গ্রহণের উপায়ও বেশ সহজ। এটি সকালে খালি পেটে পানি বা জুসের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া, সজনে পাতার গুড়া বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত সজনে পাতার গুড়া গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সজনে পাতার গুড়া
সজনে পাতার গুড়া ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। সজনে পাতার মধ্যে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফাইটোকেমিক্যাল উপাদানগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সজনে পাতা মানুষের শরীরের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, যা ক্যান্সার সৃষ্টির একটি মূল কারণ।
একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখা যায়, সজনে পাতার গুড়া ব্যবহারে ক্যান্সার কোষের প্রজনন কমে যায়। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর। সজনে পাতার মধ্যে থাকা পলিফেনল এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ক্যান্সার কোষের ডিএনএ ধ্বংস করতে পারে, ফলে কোষের বৃদ্ধি থেমে যায়। এই উপাদানগুলি ক্যান্সার কোষের প্রোটিন সংশ্লেষণ বন্ধ করে দেয়, যা ক্যান্সারের বিস্তার কমাতে সহায়ক।
এছাড়াও, সজনে পাতার গুড়া এপিজেনিন এবং কুয়ারসেটিন নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার কোষের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। বিভিন্ন পশু মডেল গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সজনে পাতা ফুসফুস এবং লিভার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কার্যকর। এই উপাদানগুলি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার কোষের বিস্তার কমাতে সহায়ক।
সংক্ষেপে, সজনে পাতার গুড়া ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপায় হতে পারে। নিয়মিত সজনে পাতা গ্রহণের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে যে, সজনে পাতার গুড়া ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে।
উপাদান | পরিমাণ | স্বাস্থ্যগুরুত্ব |
---|---|---|
ক্যালোরি | ৩৪৭ কিলোক্যালোরি | শক্তি সরবরাহ করে। |
প্রোটিন | ২৭.১ গ্রাম | পেশী গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে। |
ফ্যাট | ২.৩ গ্রাম | কোষের গঠন ও কার্যকারিতা বজায় রাখে। |
কার্বোহাইড্রেট | ৩৮.২ গ্রাম | শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। |
ডায়েটারি ফাইবার | ১৯.২ গ্রাম | হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। |
ক্যালসিয়াম | ২০০৩ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। |
লৌহ | ২৮.২ মিলিগ্রাম | রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়ক। |
পটাশিয়াম | ১৩২৪ মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩৬৮ মিলিগ্রাম | পেশী ও স্নায়ু কার্যকারিতা, হৃদয়ের স্বাস্থ্য এবং হাড়ের গঠন রক্ষা করে। |
ফসফরাস | ২০৪ মিলিগ্রাম | হাড়ের স্বাস্থ্য এবং কোষের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। |
ভিটামিন A | ১৬০০০ IU | দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। |
ভিটামিন C | ১৭ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং সর্দি-কাশির প্রতিরোধ করে। |
ভিটামিন E | ৭৮ মিলিগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। |
ভিটামিন K | ১৩০০ মাইক্রোগ্রাম | রক্তের জমাট বাধার প্রক্রিয়াতে সহায়ক। |
ভিটামিন B1 (থায়ামিন) | ২.৬ মিলিগ্রাম | কার্বোহাইড্রেটকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং নার্ভ সিস্টেম সুরক্ষা করে। |
ভিটামিন B2 (রিবোফ্লাভিন) | ২০.৫ মিলিগ্রাম | কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং এনার্জি উৎপাদনে সাহায্য করে। |
ভিটামিন B3 (নায়াসিন) | ৮.২ মিলিগ্রাম | মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। |
ভিটামিন B6 | ১.২ মিলিগ্রাম | প্রোটিন বিপাকে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। |
ভিটামিন B9 (ফোলেট) | ৪০ মাইক্রোগ্রাম | সেল ডিভিশন এবং ডিএনএ সংশ্লেষণে সাহায্য করে। |
সোডিয়াম | ৯ মিলিগ্রাম | শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখে এবং পেশী ও স্নায়ু কার্যকারিতায় সহায়ক। |
জিঙ্ক | ০.৬ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং ক্ষত সারাতে সহায়ক। |
কপার | ০.১০৫ মিলিগ্রাম | রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং স্নায়ু কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। |
সজনে পাতার গুড়া ব্যবহারের পদ্ধতি
সজনে পাতার গুড়া ব্যবহার করে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টি উপাদান সংযোজন করা অত্যন্ত সহজ এবং উপকারী। এটি বিভিন্নভাবে খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যা সজনে পাতার গুড়ার কার্যকারিতা আরো বৃদ্ধি করে। প্রাতঃরাশের সময় শেক বা স্মুদি তৈরিতে এক চামচ সজনে পাতার গুড়া মিশিয়ে নিন। এটি সহজেই পানীয়তে মিশে যায় এবং খাবারের স্বাদে কোনো প্রভাব ফেলে না।
দুপুরের খাবারে সজনে পাতার গুড়া ব্যবহার করতে পারেন স্যুপ, কারি বা অন্যান্য তরকারিতে। রান্নার সময় খাবারের সাথে এক চামচ গুড়া মেশালে এটি খাবারের পুষ্টিমান উন্নত করে এবং স্বাস্থ্যকর উপাদান সরবরাহ করে। এছাড়া, সালাদ বা রাইতাতে ছিটিয়ে দিয়ে সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা উপভোগ করা যায়।
সজনে পাতার গুড়া দিয়ে তৈরি করা যায় হেলদি চা। এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ সজনে পাতার গুড়া মিশিয়ে চা তৈরি করা যেতে পারে, যা সকালে বা সন্ধ্যায় পান করার জন্য উপযুক্ত। এটি শরীরে শক্তি যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
প্রতিদিনের ডোজ সম্পর্কে বলা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সজনে পাতার গুড়া দৈনিক ২-৩ গ্রাম যথেষ্ট। তবে, শারীরিক অবস্থা এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী ডোজ পরিবর্তন হতে পারে। সঠিক ডোজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতএব, সজনে পাতার গুড়া ব্যবহারের পদ্ধতি জানা থাকলে এটি খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হয় এবং এর আশ্চর্য কার্যকারিতা উপভোগ করা যায়।
সজনে পাতার অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
সজনে পাতা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। প্রথমত, এটি হজমশক্তি বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। সজনে পাতায় থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দূর করতে সহায়ক। এর ফলে, হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেটের সমস্যা কমে যায়।
ত্বকের সুরক্ষায় সজনে পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। সজনে পাতার পাউডার ত্বকের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধেও কার্যকর। নিয়মিত সজনে পাতা ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের বিভিন্ন প্রদাহ কমে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সজনে পাতার গুড়া অত্যন্ত সহায়ক। এতে থাকা ভিটামিন এ, সি এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। নিয়মিত সজনে পাতা সেবন করলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ ঠান্ডা, কাশি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
সজনে পাতার আরও একটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো এটি স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এতে থাকা পুষ্টিগুণ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং স্ট্রেস কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সব মিলিয়ে, সজনে পাতা শুধু হার্ট এবং ডায়াবেটিসের জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও অত্যন্ত কার্যকর। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারি।
সজনে পাতার গুড়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা
সজনে পাতার গুড়া বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য পরিচিত হলেও, এর কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের জানা উচিত। প্রথমত, অতিরিক্ত সজনে পাতার গুড়া গ্রহণ করলে হজম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে, তাদের এই উপাদানটি গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া, সজনে পাতার গুড়া রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তবে যারা ইতিমধ্যে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এটি ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্যও সজনে পাতার গুড়া ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। কিছু গবেষণা ইঙ্গিত করে যে সজনে পাতার গুড়া প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েরা এটি গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। এছাড়া, যাদের কোনো অ্যালার্জি রয়েছে, তাদেরও সজনে পাতার গুড়া ব্যবহারের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
যারা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করছেন, যেমন অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট বা রক্তপাত রোধকারী ওষুধ, তাদের সজনে পাতার গুড়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এই উপাদানটি রক্ত পাতলা করার ক্ষমতা রাখে, যা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া, সজনে পাতার গুড়া কিছু ওষুধের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ।
সজনে পাতার গুড়া ব্যবহারের আগে সবসময় মানসম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য উত্স থেকে এটি সংগ্রহ করা উচিত। সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা পেতে হলে সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক পদ্ধতিতে এটি গ্রহণ করা জরুরি। অতিরিক্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।