কোলেস্টেরল হল একটি প্রয়োজনীয় পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি হল একটি চর্বি সদৃশ পদার্থ যা লিভারে উৎপাদিত হয় এবং বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। কোলেস্টেরলের প্রধান দুটি প্রকারভেদ হল এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) এবং এইচডিএল (হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন)। এলডিএল কোলেস্টেরলকে সাধারণত ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল বলা হয় কারণ এটি আর্টারিতে জমা হয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যেখানে এইচডিএল কোলেস্টেরলকে ‘ভাল’ কোলেস্টেরল বলা হয় কারণ এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে লিভারে ফিরিয়ে নিয়ে যায় যেখানে এটি প্রসেস করা হয়।
কেন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ? উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা শরীরে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হল আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস, যা আর্টারিতে কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থের জমা হয়ে আর্টারি সংকুচিত করে ফেলে। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি।
উচ্চ 🔎︎ কোলেস্টেরলের প্রভাব কেবল হৃদরোগেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ও টিস্যুতেও বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ কোলেস্টেরল কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে শরীর সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যাভ্যাস
বাঙালীর খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই ঐতিহ্যবাহী এবং বৈচিত্র্যময়। কিন্তু অনেক সময়ে এই খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে, নানা রকম তেলেভাজা খাবারগুলি যেমন – বেগুনি, পেঁয়াজি, ফিশ ফ্রাই এবং চপ ইত্যাদি উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়ায়। তেল ও ঘি মিশ্রিত খাবার যেমন – পরোটা, কচুরি, এবং লুচি কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান কারণ হতে পারে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এই ধরনের খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, ভাতের সাথে খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগীর মাংস বা মাছ খাওয়া যেতে পারে, কারণ এগুলি তুলনামূলকভাবে কম চর্বিযুক্ত।
বাঙালীদের খাদ্যাভ্যাসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যদিও রূপচাঁদা এবং পাঙাসের মত কিছু মাছ উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত তবে ইলিশ বা দেশি মাছগুলি এবং হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এছাড়াও, সয়াবিন তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে, যা পরিমাণে কম হলেও স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
সবজির মধ্যে, পাতা সবজি এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, পুঁই শাক, এবং লাল শাক কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপযুক্ত। এছাড়াও, ফলের মধ্যে আম, পেঁপে, কলা, এবং আপেল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কারণ এগুলি ফাইবারের ভালো উৎস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
যথাযথ খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখার মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সচেতনতা এবং সঠিক জ্ঞান থাকলে বাঙালী খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেই স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি বেছে নেওয়া সম্ভব।
প্রাণিজ ফ্যাট ও কোলেস্টেরল
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাণিজ ফ্যাটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণিজ চর্বি সাধারণত মাংস, মাছ, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্যে পাওয়া যায়। এই খাবারগুলির মধ্যে কোলেস্টেরলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষত, স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি সমৃদ্ধ খাবারগুলি কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
মাংসের মধ্যে যেমন গরুর মাংস, ছাগলের মাংস এবং শূকরের মাংস উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত। বিশেষত, লাল মাংসের তুলনায় সাদা মাংসে বা পোলট্রি মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা কিছুটা কম থাকে। তবে এই মাংসগুলির স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকলে তা এড়িয়ে চলা উচিত।
মাছ সঠিকভাবে নির্বাচন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৈলাক্ত মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকারেল এবং সার্ডিনে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকলেও, অন্য মাছগুলিতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই, মাছের প্রকারভেদ দেখে তা খাওয়া উচিত।
ডিমের কুসুমেও প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে। প্রতিদিন একাধিক ডিম খাওয়া হলে তা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে, ডিমের সাদা অংশ খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে যেমন ফুল ক্রিম দুধ, মাখন, পনির এবং আইসক্রিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলা উচিত।
বিশেষ কিছু খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত মাংস, ফাস্ট ফুড এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত স্ন্যাকসও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প খুঁজে নেওয়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোলেস্টেরল
প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস এবং বিস্কুট, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে। তবে, এই খাবারগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য একটি প্রধান কারণ হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।
ফাস্ট ফুড, যেমন বার্গার, ফ্রাইড চিকেন এবং পিৎজা, সাধারণত প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট ধারণ করে। এই ফ্যাটগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানোর জন্য দায়ী। এছাড়া, ফাস্ট ফুডে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াজাত তেল শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
চিপস এবং বিস্কুটের মতো স্ন্যাক্স প্রায়ই উচ্চমাত্রার ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট ধারণ করে। এই ফ্যাটগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক। বিশেষ করে, ট্রান্স ফ্যাট শরীরের এলডিএল (ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল) বাড়ায় এবং এইচডিএল (উপকারী কোলেস্টেরল) কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে সাধারণত অতিরিক্ত লবণ ও চিনি থাকে, যা রক্তচাপ বাড়াতে এবং শরীরের অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের খাবার খাওয়া কমানো কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে তাজা ফল, শাকসবজি এবং দানা শস্য খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক।
সুতরাং, প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
ট্রান্স ফ্যাট ও কোলেস্টেরল
ট্রান্স ফ্যাট হল এক ধরনের অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড যা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি হতে পারে। প্রাকৃতিক ট্রান্স ফ্যাট সাধারণত কিছু প্রাণীজ পণ্যে পাওয়া যায়, যেমন মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্য। তবে, কৃত্রিম ট্রান্স ফ্যাট বেশি ক্ষতিকর, কারণ এটি কৃত্রিম হাইড্রোজেনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়, যা তরল উদ্ভিজ তেলকে কঠিন করে তোলে। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট সাধারণত প্যাকেটজাত খাবার, বেকড পণ্য, এবং ফাস্ট ফুডের মধ্যে পাওয়া যায়।
ট্রান্স ফ্যাট কোলেস্টেরলের স্তর বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL) বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের স্তর বাড়ায় এবং হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL) বা ‘ভাল’ কোলেস্টেরলের স্তর কমায়। এর ফলে ধমনীতে প্লাক জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এ কারণেই ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারগুলি এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রান্স ফ্যাট এড়াতে হলে প্রথমে খাবারের লেবেল পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ‘পার্শিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল’ উল্লেখ থাকলে সেই পণ্যগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। প্যাকেটজাত খাবার, যেমন চিপস, বিস্কুট, এবং কেক, প্রায়ই ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ থাকে। এছাড়া, ফাস্ট ফুড যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বেকড পণ্য এবং কিছু প্রক্রিয়াজাত মাংসেও ট্রান্স ফ্যাট থাকে।
ট্রান্স ফ্যাট এড়ানোর আরেকটি উপায় হল ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা। ঘরে তৈরি খাবার সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবারের তুলনায় স্বাস্থ্যকর হয়, কারণ এতে কম পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এছাড়া, রান্নার জন্য স্বাস্থ্যকর তেল, যেমন অলিভ অয়েল বা ক্যানোলা অয়েল ব্যবহার করা উচিত।
মিষ্টি জাতীয় খাবার ও কোলেস্টেরল
মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ধরনের খাবারগুলিতে সাধারণত উচ্চমাত্রার চিনি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে সহায়ক। চিনি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট মিশ্রিত হলে শরীরে এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি পায় এবং এইচডিএল (ভাল কোলেস্টেরল) কমে যায়। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি এবং অন্যান্য মিষ্টি খাবারগুলি উচ্চ ক্যালোরি ধারণ করে এবং এগুলি নিয়মিত খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলতে পারে। স্থূলতা এবং অতিরিক্ত চর্বি শরীরে কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া, মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলি প্রায়শই ট্রান্স ফ্যাট ধারণ করে, যা এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সাথে সরাসরি সংযুক্ত। ট্রান্স ফ্যাট শুধুমাত্র কোলেস্টেরল বাড়ায় না, এটি প্রদাহও বাড়ায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, খাদ্যতালিকা থেকে উচ্চ চিনি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবারগুলি বাদ দিতে হবে। পরিবর্তে, ফ্রেশ ফলমূল, বাদাম, এবং হালকা মিষ্টি জাতীয় খাবার নির্বাচন করা যেতে পারে। এছাড়া, ঘরে তৈরী স্বাস্থ্যকর মিষ্টি খাবার যেমন দই, ফলের পুডিং ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে যা স্বাস্থ্যকর এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
সার্বিকভাবে, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
শর্করা ও কোলেস্টেরল
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ করলে কোলেস্টেরল প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষত, প্রক্রিয়াজাত এবং রিফাইন্ড শর্করা সমৃদ্ধ খাবারগুলি কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের খাবারগুলি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি করতে পারে, যা ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) হ্রাস করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়িয়ে দেয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি যেমন প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, মিষ্টি পানীয়, এবং বেকারির আইটেমগুলি উচ্চ মাত্রার শর্করা ধারণ করে। এই খাবারগুলি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যার ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধি পায়। অতএব, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে প্রক্রিয়াজাত শর্করা যুক্ত খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।
এছাড়া, সাদা রুটি, পাস্তা, এবং সাদা চালের মতো রিফাইন্ড শর্করা যুক্ত খাবারগুলি কোলেস্টেরল বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে। এই খাবারগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় এবং শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা বৃদ্ধি করে, যা কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়ক। এর পরিবর্তে, পূর্ণ শস্য এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলি গ্রহণ করা উচিত, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
বিকল্প হিসাবে, সবজি, ফলমূল, বাদাম, এবং শস্যজাত খাবারগুলি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই খাবারগুলি শর্করা কম এবং ফাইবার বেশি হওয়ায় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এছাড়া, প্রাকৃতিক শর্করা যুক্ত খাবারগুলি যেমন ফলমূল, পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে, কারণ এগুলি উচ্চ মানের পুষ্টি সরবরাহ করে।
সুতরাং, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে, প্রক্রিয়াজাত এবং রিফাইন্ড শর্করা যুক্ত খাবারগুলি এড়িয়ে চলার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর শর্করা সমৃদ্ধ খাবারগুলি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এর ফলে হৃদরোগসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সমস্যার ঝুঁকি কমানো যায়। প্রথমত, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
দ্বিতীয়ত, লাল মাংস, প্রসেসড ফুড এবং উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার যেমন পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে, পুষ্টিকর খাবার যেমন ওটমিল, বাদাম, ফলমূল এবং সবজি অন্তর্ভুক্ত করুন যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন স্যামন এবং ম্যাকারেল খেতে পারেন যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
ডায়েট পরিবর্তনের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
অবশেষে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন কমানো অত্যন্ত জরুরি। ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সুতরাং, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এবং প্রয়োজন মতো ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এই সুপারিশগুলো মেনে চললে আপনি নিশ্চয়ই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবেন এবং একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবেন।