কোলেস্টেরল হল একটি মোটা, চর্বিযুক্ত পদার্থ যা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পাওয়া যায়। এটি একটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীতে অবদান রাখে। কোলেস্টেরল পিত্তরস তৈরি করতে সহায়তা করে, যা পরিপাকক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিত্তরস আমাদের খাদ্যের চর্বি ভাঙতে এবং হজম করতে সাহায্য করে।
এছাড়া, কোলেস্টেরল হরমোন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 🔎︎ কোলেস্টেরল থেকে প্রোজেস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, এবং টেস্টোস্টেরনের মত স্টেরয়েড হরমোন তৈরি হয়, যা নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলীতে যুক্ত থাকে। এই হরমোনগুলি আমাদের প্রজনন, বিপাক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোলেস্টেরল আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি সংশ্লেষণেও অংশগ্রহণ করে। সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে, আমাদের ত্বকের কোষগুলি কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করে। ভিটামিন ডি আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য, ইমিউন সিস্টেম এবং সামগ্রিক শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
যদিও কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে এর অতিরিক্ত পরিমাণ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। কোলেস্টেরলের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে: ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল (হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) এবং খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন)। এইচডিএল কোলেস্টেরল রক্তনালী থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে ফেলে এবং লিভারে নিয়ে যায়, যা শরীর থেকে নির্গত হয়। অন্যদিকে, এলডিএল কোলেস্টেরল রক্তনালীতে জমা হয়ে হৃদরোগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
তাই, কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য হলেও, এর পরিমাণ ও প্রকারের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কি?
ভালো কোলেস্টেরল, যা উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (HDL) নামেও পরিচিত, আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। HDL কোলেস্টেরল আমাদের রক্তনালী থেকে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) অপসারণ করে এবং লিভারে নিয়ে যায়, যেখানে এটি প্রক্রিয়াজাত হয় এবং শরীর থেকে নির্গত হয়। এই প্রক্রিয়াটি আমাদের রক্তনালীকে সুস্থ রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
HDL কোলেস্টেরল কেবলমাত্র খারাপ কোলেস্টেরল অপসারণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে, যা হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ। এছাড়াও, এটি আমাদের রক্তনালীর প্রাচীরকে স্থিতিস্থাপক ও স্বাস্থ্যকর রাখে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে কিছু জীবনধারা পরিবর্তন করা যেতে পারে। প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যেমন: পুষ্টিকর সবজি, ফলমূল, এবং সম্পূর্ণ শস্য গ্রহণ, HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এছাড়াও, অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকা এবং ধূমপান ত্যাগ করা উচিত, কারণ এই অভ্যাসগুলি HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, উচ্চ মাত্রার HDL কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। সুতরাং, আমাদের হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা উচ্চ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কি?
খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL (Low-Density Lipoprotein) একটি প্রকারের কোলেস্টেরল যা আমাদের রক্তে উপস্থিত থাকে। এটি শরীরের বিভিন্ন কোষে কোলেস্টেরল সরবরাহ করে, যা কোষের গঠন এবং কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। তবে, অতিরিক্ত LDL কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেয়ালে জমা হতে পারে এবং ধমনী প্রাচীরকে শক্ত করে দিতে পারে, যা এথেরোসক্লেরোসিস নামে পরিচিত।
এথেরোসক্লেরোসিস এমন একটি অবস্থা যেখানে ধমনীতে প্লাক জমা হয়। এই প্লাকগুলি প্রধানত কোলেস্টেরল, ফ্যাট এবং অন্যান্য উপাদান নিয়ে গঠিত হয়। যখন ধমনীতে প্লাক জমা হয়, তখন রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। উচ্চ মাত্রার LDL কোলেস্টেরল ধমনী সংকুচিত এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর উচ্চ মাত্রা কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং যথাযথ ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। যে খাবারগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট উচ্চ মাত্রায় থাকে, সেগুলি খাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো। এছাড়া, ধূমপান ত্যাগ করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও LDL কোলেস্টেরল হ্রাসে সহায়ক হতে পারে।
অতএব, খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। নিয়মিত রক্তপরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রেখে আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে পারি।
কোলেস্টেরলের উৎপত্তি এবং উৎস
কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা প্রধানত লিভারে উৎপন্ন হয়। লিভার প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল তৈরি করে এবং এটি শরীরের বিভিন্ন কোষে প্রেরণ করা হয়। কোলেস্টেরল বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে, যেমন হরমোন উৎপাদন, ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ এবং কোষের গঠন স্থিতিশীল রাখা।
কোলেস্টেরল শুধুমাত্র লিভারেই উৎপন্ন হয় না, বরং আমরা যে খাবার খাই সেখান থেকেও এটি আসে। প্রধানত প্রাণীজ উৎস থেকে কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং তেল কোলেস্টেরলের প্রধান উৎস। এই খাবারগুলি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং সেখান থেকে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
মাংস এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যে পরিপূর্ণ কোলেস্টেরল থাকে যা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিজ্জ তেল যেমন পাম তেল এবং নারকেল তেলেও কোলেস্টেরল থাকে, যা আমাদের খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব ফেলে। তবে, শাকসবজি এবং ফলমূল কোলেস্টেরল মুক্ত। তাই, সচেতন খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা প্রয়োজন যাতে শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় থাকে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণ হতে পারে, তাই এটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
শিশু এবং কিশোরদের (2-19 বছর) ক্ষেত্রে কোলেস্টরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কত থাকা উচিত
কোলেস্টেরলের ধরন | ভালো স্তর (mg/dL) | সীমান্ত স্তর (mg/dL) | খারাপ স্তর (mg/dL) |
---|---|---|---|
মোট কোলেস্টেরল | < 170 | 170-199 | ≥ 200 |
এলডিএল (LDL) | < 110 | 110-129 | ≥ 130 |
এইচডিএল (HDL) | ≥ 45 | 40-45 | < 40 |
ট্রাইগ্লিসারাইড | < 75 (0-9 বছর), < 90 (10-19 বছর) | 75-99 (0-9 বছর), 90-129 (10-19 বছর) | ≥ 100 (0-9 বছর), ≥ 130 (10-19 বছর) |
প্রাপ্তবয়স্ক (20 বছর এবং তার বেশি) পুরুষের ক্ষেত্রে কোলেস্টরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কত থাকা উচিত
কোলেস্টেরলের ধরন | ভালো স্তর (mg/dL) | সীমান্ত স্তর (mg/dL) | খারাপ স্তর (mg/dL) |
---|---|---|---|
মোট কোলেস্টেরল | < 200 | 200-239 | ≥ 240 |
এলডিএল (LDL) | < 100 | 100-159 | ≥ 160 |
এইচডিএল (HDL) | ≥ 60 | 40-59 | < 40 |
ট্রাইগ্লিসারাইড | < 150 | 150-199 | ≥ 200 |
প্রাপ্তবয়স্ক (20 বছর এবং তার বেশি) মহিলাদের ক্ষেত্রে কোলেস্টরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কত থাকা উচিত
কোলেস্টেরলের ধরন | ভালো স্তর (mg/dL) | সীমান্ত স্তর (mg/dL) | খারাপ স্তর (mg/dL) |
---|---|---|---|
মোট কোলেস্টেরল | < 200 | 200-239 | ≥ 240 |
এলডিএল (LDL) | < 100 | 100-159 | ≥ 160 |
এইচডিএল (HDL) | ≥ 60 | 50-59 | < 50 |
ট্রাইগ্লিসারাইড | < 150 | 150-199 | ≥ 200 |
ভালো কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য
কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের একটি অত্যাবশ্যক উপাদান, কিন্তু এর দুটি প্রকার রয়েছে: ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL)। এই দুটি প্রকারের কোলেস্টেরল আমাদের স্বাস্থ্যের উপর ভিন্ন প্রভাব ফেলে।
ভালো কোলেস্টেরল বা হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL) আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। HDL কোলেস্টেরল রক্তনালী থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সংগ্রহ করে এবং তা লিভারে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে এটি প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং শরীর থেকে অপসারিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি রক্তনালীর দেয়ালে কোলেস্টেরলের জমা কমায়, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে খারাপ কোলেস্টেরল বা লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL) আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। LDL কোলেস্টেরল রক্তনালীতে জমা হওয়ার প্রবণতা থাকে, যা প্লাক তৈরি করতে পারে। এই প্লাক রক্তনালীর দেয়ালকে সংকুচিত করে এবং রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ভালো এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মধ্যে এই মৌলিক পার্থক্যগুলি আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ধূমপান ত্যাগ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরে HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে এবং LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারি।
সুতরাং, ভালো কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য বুঝে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি করা অত্যন্ত জরুরি।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা
শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভ্যাস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল (হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) বাড়ানো এবং খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
প্রথমত, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ধমনীকে সুস্থ রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। মাছের তেল, স্যামন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন, এবং ফ্ল্যাক্সসিডের তেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস।
দ্বিতীয়ত, ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ফাইবার শরীর থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বের করে দিতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ওটমিল, ব্রাউন রাইস, ফলমূল, শাকসবজি এবং লেগিউম ফাইবারের ভালো উৎস।
তৃতীয়ত, ট্রান্স ফ্যাট এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রান্স ফ্যাট খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল কমিয়ে দেয়। এটি মূলত প্রসেসড খাবার, ফাস্ট ফুড এবং বেকড পণ্যগুলিতে পাওয়া যায়। তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
এছাড়া, বাদাম এবং বীজও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বাদাম এবং বীজে মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
সবশেষে, পর্যাপ্ত জল পান করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে এই অভ্যাসগুলি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং সার্বিকভাবে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে।
জীবনধারার পরিবর্তন ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে জীবনধারার পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক জীবনধারা অনুসরণ করলে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল (HDL) বাড়ানো এবং খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (LDL) কমানো সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ করা, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা হল এমন কিছু পরিবর্তন যা কোলেস্টেরল স্তরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিটের মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান ত্যাগ করলে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ধূমপান ত্যাগ করার পর হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। ধূমপান শরীরের কোলেস্টেরল বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে, যা খারাপ কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়ক। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধূমপান ত্যাগ করা একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে কোলেস্টেরল স্তরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমাতে সহায়ক। ফলমূল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
সঠিক জীবনধারা অনুসরণ করলে ভালো কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মধ্যে সঠিক সমন্বয় বজায় রাখা সম্ভব, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা পদ্ধতি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের ব্যবহার, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং জীবনধারা পরিবর্তন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথমত, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায়ই স্ট্যাটিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এই ঔষধগুলি লিভারের মাধ্যমে কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যার ফলে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (LDL) এর মাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়াও, ফাইব্রেটস ও নিষ্ক্রিয় রেজিন জাতীয় ঔষধও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে, ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে কোলেস্টেরল মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয়ত, জীবনধারা পরিবর্তন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যেমন- সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ওটস, বাদাম এবং মাছ খাওয়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম ও ধূমপান পরিহার করা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনও সহায়ক হতে পারে।
সর্বশেষে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনধারা পরিবর্তন ও ঔষধের সঠিক ব্যবহার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।