ক্যান্সার, আধুনিক বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, যেমন ভারত ও বাংলাদেশে, এর প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সুখবর এই যে, জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই মরণব্যাধির ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। খাদ্য এবং ক্যান্সারের মধ্যকার সম্পর্কের গভীরে গিয়ে আমরা এই রোগ প্রতিরোধের জন্য সচেতন পদক্ষেপ নিতে পারি।
উদ্ভিজ্জ খাবার বলতে সাধারণত ফল, শাকসবজি এবং শস্যজাতীয় খাদ্যকে নির্দেশ করে, যা ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারের ভালো উৎস। এই খাদ্যগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে, প্রানীজ খাদ্য হল মাংস, মাছ, ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবার, যা প্রোটিন এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ভালো উৎস হলেও, কখনও কখনও স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে।
বেশি জ্বালানি এবং তেলে ভাজা খাবারগুলোতে সাধারণত ট্রান্স ফ্যাট এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরণের খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, রেড মিট এবং প্রসেসড মিট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে প্রমাণিত হয়েছে।
উদ্ভিজ্জ খাদ্যের প্রভাব
উদ্ভিজ্জ খাদ্য, যেমন ফল, সবজি, শস্য, এবং বাদাম, ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উদ্ভিজ্জ খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের কোষগুলিকে ফ্রি র্যাডিক্যাল নামক ক্ষতিকর অণু থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিক্যালগুলি ক্যান্সারের কোষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি মূল ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, এবং বিটা-ক্যারোটিন উল্লেখযোগ্য।
ফাইবারও ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। বিশেষ করে, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব ব্যক্তির খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফাইবার থাকে, তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
উদ্ভিজ্জ খাদ্যে আরও থাকে বিভিন্ন প্রকার ফাইটোকেমিক্যাল, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যারোটেনয়েডস, এবং সালফোরাফেন, যা কার্যকরভাবে ক্যান্সারের কোষ গঠনের প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। এই উপাদানগুলি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ক্যান্সারের কোষগুলিকে নষ্ট করতে সহায়তা করে।
উদ্ভিজ্জ খাদ্যের আরও একটি সুবিধা হল এটি সাধারণত কম ক্যালোরি এবং কম চর্বিযুক্ত হয়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই সুষম ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বোপরি, উদ্ভিজ্জ খাদ্যের নিয়মিত গ্রহণ শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে।
প্রাণীজ খাদ্যের প্রভাব
প্রাণীজ খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান আমাদের খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, এর 🔎︎ ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং অন্যান্য প্রাণীজ খাদ্য উপাদান কিভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে তা নিয়ে গবেষণাগুলো ক্রমাগত নতুন তথ্য প্রদান করছে।
লাল মাংস, যেমন গরুর মাংস , ছাগল , শূকর এবং ভেড়ার মাংস, প্রোটিন এবং আয়রনের উৎকৃষ্ট উৎস হলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে কোলন এবং রেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন লাল মাংসের অতিরিক্ত মাত্রা গ্রহণ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ১৭% বাড়াতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত মাংস, যেমন সসেজ, হট ডগ এবং বেকন, এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং নাইট্রাইটস যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) অনুসারে, প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ১৮% বাড়াতে পারে।
এছাড়া, রান্নার পদ্ধতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেশি তাপমাত্রায়, যেমন গ্রিলিং বা ফ্রাইং, মাংস রান্না করলে হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস (HCAs) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বনস (PAHs) তৈরি হতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে, প্রাণীজ খাদ্য সম্পূর্ণরূপে বর্জন করার প্রয়োজন নেই। পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর রান্না পদ্ধতির মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, বেকিং বা ব্রোলিংয়ের মতো কম তাপে রান্নার পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া, লাল মাংসের পরিবর্তে চর্বিমুক্ত মুরগির মাংস বা মাছ একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।
প্রাণীজ খাদ্যের ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক হতে পারে।
বেশি জ্বালানি ও তেলে ভাজা খাবারের প্রভাব
বেশি জ্বালানি ও তেলে ভাজা খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে। এই ধরনের খাবার প্রস্তুত করার সময় তাপমাত্রা বেশি হলে বেশ কিছু ক্ষতিকর কেমিক্যাল উৎপন্ন হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাপমাত্রা বেশি হলে হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস (HCAs) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনস (PAHs) উৎপন্ন হয়। এই কেমিক্যালগুলি ক্যান্সারের উন্নয়নের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
HCAs মূলত মাংস, পোল্ট্রি এবং মাছের মতো প্রাণীজ খাবারগুলি উচ্চ তাপে রান্না করার সময় তৈরি হয়। অন্যদিকে, PAHs তেল এবং চর্বি বেশি থাকা খাবারগুলি ধোঁয়া ও গ্রিলিং করার সময় উৎপন্ন হয়। এই কেমিক্যালগুলি আমাদের ডিএনএ-র সাথে প্রতিক্রিয়া করে, যা কোষের মিউটেশন এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
উদ্ভিজ্জ খাবারের ক্ষেত্রে, অধিকাংশ সবজি ও ফল সরাসরি তাপে ভেজে খাওয়ার পরিবর্তে সিদ্ধ করা বা অল্প তাপে রান্না করা বেশি স্বাস্থ্যকর। উদ্ভিজ্জ খাবারের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস বেশি পরিমাণে থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। তবে, উদ্ভিজ্জ তেলে ভাজা খাবারের মধ্যে, বিশেষ করে যখন তা উচ্চ তাপে রান্না করা হয়, তখন একই ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল তৈরি হতে পারে।
তবে, খাবার প্রস্তুতির পদ্ধতির পাশাপাশি, সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষম খাদ্যাভ্যাসে উদ্ভিজ্জ খাবারের পরিমাণ বাড়ানো এবং প্রাণীজ খাবার ও উচ্চ তাপে ভাজা খাবারের পরিমাণ কমানো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের নির্দেশিকা
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য কিছু সাধারণ নির্দেশিকা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণে মনোযোগ দেওয়া উচিত। উদ্ভিজ্জ খাদ্য যেমন শাকসবজি, ফলমূল, শস্য এবং বাদাম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। এই প্রাকৃতিক খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, এবং ফাইবার থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
দ্বিতীয়ত, প্রাণীজ খাদ্য যখন গ্রহণ করা হয়, তখন কম চর্বিযুক্ত খাদ্য বেছে নেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, চর্বিহীন মাংস, স্কিমড দুধ, এবং কম চর্বির দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হতে পারে। এই ধরনের খাদ্য হৃদরোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
তৃতীয়ত, সঠিক রান্না পদ্ধতি অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। খাবার রান্নার সময় অধিক তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত, বিশেষ করে তেলে ভাজা খাবার। তেলে ভাজা খাবার অধিকাংশ সময় ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উৎস যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। পরিবর্তে, বেকিং, গ্রিলিং, স্টিমিং বা মাইক্রোওয়েভিং এর মতো স্বাস্থ্যকর রান্না পদ্ধতি বেছে নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মদ্যপান এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা। এই অভ্যাসগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে।
সর্বোপরি, একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে উদ্ভিজ্জ খাদ্য, যেমন শাকসবজি, ফলমূল, এবং সম্পূর্ণ শস্য, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি এবং ফলমূলের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
প্রাণীজ খাদ্যের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অধিক তেলে ভাজা খাবার এবং রেড মিটের সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রক্রিয়াজাত মাংস, যেমন হটডগ এবং সসেজ, নিয়মিতভাবে গ্রহণ করলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও, রেড মিটের অতিরিক্ত সেবন স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণকারীদের মধ্যে ক্যান্সারের হার কম। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব মানুষ বেশি পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, এবং আঁশযুক্ত খাবার খায়, তাদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম। এছাড়া, ইউরোপিয়ান প্রোস্পেক্টিভ ইনভেস্টিগেশন ইনটু ক্যান্সার অ্যান্ড নিউট্রিশন (EPIC) স্টাডির তথ্য অনুযায়ী, উদ্ভিজ্জ খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ২০%-৩০% কমিয়ে দিতে পারে।
অন্যদিকে, প্রাণীজ খাদ্য গ্রহণকারীদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, নিরামিষভোজীদের তুলনায় মাংসভোজীদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ১৭% বেশি বলে একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
সর্বোপরি, উদ্ভিজ্জ খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এবং প্রাণীজ খাদ্যের অতিরিক্ত সেবন এড়িয়ে চলা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
উদ্ভিদভিত্তিক বনাম প্রাণীজ খাবার:
বিশ্বখ্যাত ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চ (AICR) এর সুপারিশ অনুযায়ী, উদ্ভিদভিত্তিক খাবারে সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী। তাদের মতে, আমাদের প্রতিদিনের খাবারের দুই-তৃতীয়াংশই হওয়া উচিত শাকসবজি, ফলমূল, গোটা শস্য এবং ডাল জাতীয় উদ্ভিজ্জ খাবার। বাকি এক-তৃতীয়াংশে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম জাতীয় প্রাণীজ খাবার রাখা যেতে পারে। এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস শরীরে ক্ষতিকর চর্বির পরিমাণ কমায় এবং উদ্ভিদজাত খাবারে থাকা ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদানের পরিমাণ বাড়ায়।
খাদ্যের বৈচিত্র্যের গুরুত্ব:
রঙ-বেরঙের ফলমূল ও শাকসবজি আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ফলমূল এবং শাকসবজি খান, তাদের পাকস্থলী, কোলন, স্তন, ফুসফুস সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। এছাড়াও, উদ্ভিদভিত্তিক খাবার সমৃদ্ধ সুষম খাদ্যাভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা পরোক্ষভাবে কোলন, কিডনি এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কোন ধরণের খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার
- ফোলেট: দিনের শুরুতে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। ফোলেট হলো এক ধরনের বি ভিটামিন, যা শরীরের কোষের ডিএনএ মেরামত ও নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল, কমলার রস, বাদাম, কলা, এবং সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট পাওয়া যায়।
- গ্রিন টি: নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে লিভার, কোলন এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। গ্রিন টি’তে থাকা পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে এবং ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে।
- গোটা শস্য: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল চাল, লাল আটা, ওটমিল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়াও, গোটা শস্যে উপস্থিত অন্যান্য উপকারী উপাদান লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
- রঙিন ফল ও শাকসবজি: লাল, হলুদ, সবুজ,নানান রঙের ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- রসুন, আদা: এসব খাবারে থাকা সালফার যৌগ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন এবং আদা নিয়মিত খেলে পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
- হলুদ: হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। এছাড়াও, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এড়িয়ে চলুন:
- প্রক্রিয়াজাত মাংস: সসেজ, সালামি, বেকন, হটডগ জাতীয় প্রক্রিয়াজাত মাংসে থাকা প্রিজারভেটিভ এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ কোলন ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অতিরিক্ত চিনি: অতিরিক্ত চিনি শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে এবং স্থূলতার কারণ হয়, যা পরোক্ষভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অ্যালকোহল: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন মুখ, গলা, লিভার, স্তন সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- তেলে ভাজা ও গ্রিল করা খাবার: উচ্চ তাপমাত্রায় খাবার ভাজা বা গ্রিল করলে তাতে এক্রিলামাইড এবং হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস (HCAs) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনস (PAHs) নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।