রক্তচাপের ওঠানামা বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপ অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তচাপের দ্রুত ওঠানামার কারণ হতে পারে। মানসিক চাপের সময় শরীরে কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিন হরমোনের স্তর বেড়ে যায় যা রক্তচাপ বাড়ায়।
খাদ্যাভ্যাসও রক্তচাপের ওঠানামার জন্য দায়ী হতে পারে। উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য যেমন প্রসেসড ফুড এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল সেবনও রক্তচাপের ওঠানামার কারণ হতে পারে।
শারীরিক অসুস্থতা রক্তচাপের ওঠানামার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষত কিডনির সমস্যা, থাইরয়েডের অস্বাভাবিকতা, এবং হৃদরোগ রক্তচাপের ওঠানামায় প্রভাব ফেলে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে তরল ও সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়ায়।
অনেক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রক্তচাপের ওঠানামার কারণ হতে পারে। বিশেষত কিছু ব্যথানাশক ঔষধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, এবং ঠান্ডার ঔষধ রক্তচাপের ওঠানামায় ভুমিকা রাখতে পারে। এই ঔষধগুলি শরীরে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন আনে যা রক্তচাপ প্রভাবিত করে।
রক্তচাপের ওঠানামা শরীরে বিভিন্ন প্রভাব ফেলে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিম্ন রক্তচাপের কারণে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এবং জ্ঞান হারানোর মতো সমস্যাও হতে পারে। অতএব, রক্তচাপের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তচাপ পরিমাপের সঠিক পদ্ধতি
রক্তচাপ সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি একটি নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। রক্তচাপ মাপার আগে ৫-১০ মিনিট বিশ্রামে থাকুন এবং স্থিরভাবে বসুন। রক্তচাপ মাপার সময় আপনার হাতটি হৃদয়ের উচ্চতায় রেখে মাপুন।
প্রথমে হাতের কাপড় সরিয়ে ফেলুন এবং হাতের উপরে ম্যানজেটটি সঠিকভাবে বাঁধুন। ম্যানজেটটি খুব ঢিলা বা খুব টাইট হওয়া উচিত নয়। যন্ত্রের নির্দেশাবলী মেনে ধীরে ধীরে ম্যানজেটটি ফুলিয়ে তারপর আস্তে আস্তে বাতাস বের করে রক্তচাপ মাপুন। পরিমাপ করার সময় কথা বলা বা হিলহিল করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতিবার মাপার সময় একই হাতে এবং একই অবস্থানে মাপা উচিত।
রক্তচাপ মাপার সঠিক সময় নির্ধারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রক্তচাপ মাপা উত্তম। তবে, একটানা বিশ্রামের পরে এবং খাবারের কমপক্ষে আধা ঘন্টা পরে রক্তচাপ মাপা উচিত। দিনের বিভিন্ন সময়ের রক্তচাপের পরিবর্তন লক্ষ্য করার জন্য নিয়মিতভাবে রক্তচাপ মাপার পরামর্শ দেওয়া হয়।
নিয়মিত রক্তচাপ মাপা আপনাকে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে পারে এবং যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন তাড়াতাড়ি ধরতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে এবং আপনার চিকিৎসককে উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপার পরামর্শ মেনে চললে আপনি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবেন।
বয়স (বছর) | উচ্চতা (সেমি) | ওজন (কেজি) | লিঙ্গ | রক্তচাপ (সিস্টোলিক/ডায়াস্টোলিক) |
---|---|---|---|---|
20-24 | 165-175 | 60-75 | পুরুষ | 120/79 |
20-24 | 155-165 | 50-65 | নারী | 115/75 |
25-29 | 165-175 | 65-80 | পুরুষ | 121/80 |
25-29 | 155-165 | 55-70 | নারী | 116/76 |
30-34 | 165-175 | 70-85 | পুরুষ | 122/81 |
30-34 | 155-165 | 60-75 | নারী | 117/77 |
35-39 | 165-175 | 75-90 | পুরুষ | 123/82 |
35-39 | 155-165 | 65-80 | নারী | 118/78 |
40-44 | 165-175 | 75-95 | পুরুষ | 125/83 |
40-44 | 155-165 | 65-85 | নারী | 120/79 |
45-49 | 165-175 | 75-95 | পুরুষ | 127/84 |
45-49 | 155-165 | 65-85 | নারী | 122/80 |
50-54 | 165-175 | 75-95 | পুরুষ | 129/85 |
50-54 | 155-165 | 65-85 | নারী | 124/81 |
55-59 | 165-175 | 75-95 | পুরুষ | 131/86 |
55-59 | 155-165 | 65-85 | নারী | 126/82 |
60-64 | 165-175 | 75-95 | পুরুষ | 134/87 |
60-64 | 155-165 | 65-85 | নারী | 129/84 |
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, কম লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লবণ রক্তচাপ বাড়ানোর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি, তাই রান্নায় অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন প্রক্রিয়াজাত মাংস, স্ন্যাকস এবং ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এসব খাবারে লবণের পরিমাণ বেশী থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও সবজি গ্রহণ করা উচিত। ফল এবং সবজিতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষ করে, কলা, কমলালেবু, পালং শাক এবং আলু পটাসিয়ামের ভালো উৎস। এছাড়া, আঁশযুক্ত খাবার যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস এবং পুরো শস্যজাত খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীরের সমস্ত কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য এবং এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। চা-কফি জাতীয় ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম পান করাই ভালো, কারণ ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
চর্বিযুক্ত খাবার, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলা উচিত। এসব ফ্যাট রক্তচাপ বাড়াতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। বরং, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, বিশেষ করে স্যামন, ম্যাকারেল, এবং টুনা গ্রহণ করা ভালো।
পরিশেষে, চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। চিনিযুক্ত খাবার রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাঁধা সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
শারীরিক কার্যক্রম ও ব্যায়ামের ভূমিকা
নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম এবং ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। এটি শুধুমাত্র রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে না, বরং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করে এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি থেকে উচ্চ মাত্রার ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো করা উচিত। সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন এই ধরণের ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এমনকি যদি সময় কম থাকে, তবুও পাঁচ থেকে দশ মিনিটের ছোট ছোট ব্যায়াম সেশনও সহায়ক হতে পারে।
এছাড়াও, যোগব্যায়াম এবং পাইলেটসের মতো নমনীয়তা এবং ভারসাম্য উন্নতকারী ব্যায়ামও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এসব ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে রক্তচাপ কমে আসে।
ব্যায়ামের সময়কাল এবং ধরন নির্ধারণে ব্যক্তিগত শারীরিক ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করা বিশেষভাবে জরুরি যদি কারো উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।
সঠিক ব্যায়াম পরিকল্পনা এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মানসিক চাপ কমানোর উপায়
রক্তচাপের ওঠানামা কমাতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যা নিয়মিত অনুশীলন করলে রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করতে পারে।
প্রথমত, মেডিটেশন একটি শক্তিশালী পদ্ধতি যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন কিছু সময় মেডিটেশনে ব্যয় করা মানসিক শান্তি আনতে পারে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে। মেডিটেশন করার জন্য একটি শান্ত জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
দ্বিতীয়ত, যোগব্যায়াম বা যোগা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিভিন্ন যোগব্যায়াম আসন মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক, পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কার্যকরী। উদাহরণস্বরূপ, শবাসন এবং প্রণায়াম প্রক্রিয়া মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত নিদ্রা মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম উপায়। ঘুমের ঘাটতি মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে রক্তচাপের ওঠানামা হতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুতে যাওয়ার আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকা এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
চতুর্থত, শখের কাজে সময় দেওয়া মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। নিজের পছন্দের কাজ যেমন বই পড়া, সংগীত শোনা, কিংবা বাগান করা মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এই উপায়গুলো মেনে চললে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে রক্তচাপের ওঠানামা কমানো যেতে পারে। নিয়মিত অনুশীলন এবং সঠিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখা সম্ভব।
ঔষধ সেবনের নিয়ম ও চিকিৎসকের পরামর্শ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঔষধ সেবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য চিকিৎসক সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ প্রস্তাব করে থাকেন। এই ঔষধগুলি নিয়মিত এবং সঠিকভাবে সেবন করা অত্যাবশ্যক, কারণ ঔষধ সঠিকভাবে সেবন না করলে রক্তচাপের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
প্রথমত, আপনার ঔষধগুলি কোন সময়ে এবং কোন ডোজে সেবন করতে হবে তা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা উচিত। অনেক সময় রোগীরা ঔষধ সেবনের সময়সূচি মেনে চলতে ভুলে যান, যা 🔎︎ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঔষধ সেবন করা উচিত এবং এটি একটি অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের নিয়মেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনযাত্রায়ও প্রভাব ফেলে। চিকিৎসক প্রায়ই রোগীদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, এবং মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও প্রয়োজনীয়, কারণ এটি রক্তচাপের পরিবর্তনগুলি নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করে।
তৃতীয়ত, ঔষধ সেবনের পাশাপাশি অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভূত হয় অথবা ঔষধ কার্যকর না হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। চিকিৎসক নতুন ঔষধ প্রস্তাব করতে পারেন অথবা বর্তমান ঔষধের ডোজ পরিবর্তন করতে পারেন।
সর্বোপরি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঔষধ সঠিকভাবে সেবন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
জীবনধারার পরিবর্তন
রক্তচাপের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবনধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা অত্যাবশ্যক। ধূমপান রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, মদ্যপান অতিরিক্ত করলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, এই দুই অভ্যাস থেকে বিরত থাকা স্বাস্থ্যকর রক্তচাপের জন্য উপকারী।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে, যার মধ্যে রক্তচাপও অন্তর্ভুক্ত। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত এবং ঘুমের মান উন্নত করতে নির্দিষ্ট সময়ানুসারে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অন্যান্য দিকের মধ্যে সুষম খাদ্যাভ্যাস অন্যতম। ফলমূল, শাকসবজি, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটানো যায়। লবণ ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি কার্যকর উপায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা রক্তচাপকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ কমানোও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
সর্বোপরি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবনধারায় এই পরিবর্তনগুলো আনা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা রক্তচাপের ওঠানামা কমাতে সক্ষম হতে পারি এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারি।
হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে খুবই উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে উচ্চ রক্তচাপকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
- শান্ত থাকুন ও বিশ্রাম নিন:
- মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। শান্ত কোনো জায়গায় বসে গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। এতে মন শান্ত হবে, হৃদস্পন্দন কমবে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে।
- পানি পান করুন:
- এক গ্লাস পানি পান করুন। পানিশূন্যতা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।
- ঠান্ডা সেঁক দিন:
- ঘাড়ে ঠান্ডা সেঁক দিলে শিরা-উপশিরা দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়, ফলে রক্তচাপ কমে।
- পায়ে গরম পানির সেঁক দিন:
- গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে শরীর ঝিমঝিম করে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে, রক্তচাপ কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত টিপস
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি এবং এটি সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। সঠিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু অতিরিক্ত টিপস ও কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রথমেই, নিয়মিত রক্তচাপ মনিটরিং করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে আপনার রক্তচাপের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেবে এবং আপনি যে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন সম্পর্কে দ্রুত জানতে পারবেন। রক্তচাপ মাপার জন্য বাজারে অনেক বৈদ্যুতিন যন্ত্র পাওয়া যায়, যা ঘরে বসেই ব্যবহার করা যায়।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। মানসিক চাপ রক্তচাপ বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। তাই প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, হাসি-মজা করা এবং একসঙ্গে কিছু আনন্দময় কাজ করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা সাইক্লিং করা। খাদ্যে কম লবণ ও বেশি ফলমূল ও শাকসবজি রাখুন।
এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম পান করা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি ও চা কম গ্রহণ করা উচিত।
সবশেষে, নিয়মিত রক্তচাপ মাপা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে সহায়ক।