সজনের লম্বা ডাঁটার ভিতরে যে বীজ থাকে অবহেলা ভরে অনেকেই এটাকে ফেলে দেন ,কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে এই সজনে বীজই হল সুপারফুড । সজনের গাছ, বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera, মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় উদ্ভিদ হলেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হয়।
বীজগুলো ছোট, গোলাকার এবং বাদামি রঙের হয়ে থাকে। এগুলোকে প্রায়শই কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া হয় এবং এর থেকে তৈলও নিষ্কাশন করা হয়। সজনের বীজের পুষ্টিগুণ অসাধারণ। এতে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, এবং পটাশিয়াম থাকে। এছাড়াও এতে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
সজনের বীজের উৎপত্তিস্থল ভারত এবং বাংলাদেশ হলেও এটি বর্তমানে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। এটি একটি বহুমুখী গাছ, যা খাদ্য, পুষ্টি, এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
সজনের বীজের উপকারিতা প্রসঙ্গে আরও বলা যায় যে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলগুলোকে নিরসন করতে সহায়তা করে। এর ফলে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং বার্ধক্যের লক্ষণগুলো কমে আসে। এছাড়াও সজনের বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল ত্বক এবং চুলের যত্নে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
সজনের বীজ শুধুমাত্র পুষ্টিগুণসমৃদ্ধই নয়, এটি প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলির জন্যও সুপরিচিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত সজনের বীজ সেবন করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, 🔎︎ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা, এবং হজমশক্তি বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।
পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনের বীজ
সজনের বীজের পুষ্টিগুণ অত্যন্ত সমৃদ্ধ, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ উপাদান থাকে, যা আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক।
প্রথমেই বলতে হয়, সজনের বীজে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং পেশীর বৃদ্ধি ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য। প্রোটিনের পাশাপাশি, এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, এবং ই, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী, ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা কোষের ক্ষতি রোধ করে।
সজনের বীজে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদানও পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় এবং এটি মাংসপেশীর শিথিলতা ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতায় সহায়ক।
এছাড়াও, সজনের বীজে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকরী। ফাইবার আমাদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে, ফলে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
সজনের বীজে যে সমস্ত পুষ্টিগুণ রয়েছে, তা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর নিয়মিত গ্রহণ আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক হতে পারে।
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | স্বাস্থ্যগুরুত্ব |
---|---|---|
প্রোটিন | ২৫-৩৫ গ্রাম | পেশি গঠনে সহায়ক, সেল মেরামত ও বৃদ্ধি |
ফ্যাট | ৩০-৪০ গ্রাম | শক্তির উৎস, কোষ গঠনে সহায়ক |
কার্বোহাইড্রেট | ৮-১২ গ্রাম | শক্তির প্রধান উৎস |
ডায়েটারি ফাইবার | ২-৫ গ্রাম | হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ |
ভিটামিন এ | ৬৭৫০ IU | দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, ইমিউন সিস্টেম সাপোর্ট করে |
ভিটামিন সি | ৪০-৫০ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট |
ক্যালসিয়াম | ৩০০-৪০০ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের গঠন ও সুরক্ষা |
পটাসিয়াম | ১২০০-১৫০০ মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, হৃদরোগ প্রতিরোধ |
ম্যাগনেসিয়াম | ১০০-২০০ মিলিগ্রাম | পেশি ও নার্ভ কার্যক্রমে সহায়ক, মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক |
আয়রন | ২০-২৫ মিলিগ্রাম | হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়ক, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ |
জিঙ্ক | ৩-৫ মিলিগ্রাম | ইমিউন ফাংশন উন্নত করে, সেল ডিভিশনে সহায়ক |
ফসফরাস | ১০০-২০০ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখে, শক্তি উৎপাদনে সহায়ক |
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) | ০.২-০.৫ মিলিগ্রাম | স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে সহায়ক, কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমে সহায়ক |
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) | ০.৩-০.৬ মিলিগ্রাম | শক্তি উৎপাদনে সহায়ক, ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে |
ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) | ২-৪ মিলিগ্রাম | স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে সহায়ক, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক |
সেলেনিয়াম | ৫-১০ মাইক্রোগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক |
ফোলেট | ৪০-৮০ মাইক্রোগ্রাম | DNA সংশ্লেষণে সহায়ক, গর্ভাবস্থায় শিশুর সঠিক বৃদ্ধি |
কপার | ০.৫-১ মিলিগ্রাম | রক্ত তৈরিতে সহায়ক, নার্ভ এবং ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্রমে সহায়ক |
ম্যাঙ্গানিজ | ২-৪ মিলিগ্রাম | হাড়ের গঠন, বিপাক প্রক্রিয়া, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাংশনে সহায়ক |
ফাইটোস্টেরল | ৭০-১০০ মিলিগ্রাম | কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সহায়ক, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস |
গ্লুকোসিনোলেটস | বিভিন্ন | ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক, লিভার ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে |
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
সজনের বীজের অন্যতম প্রধান উপকারিতা হল এর অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষমতা। সজনের বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়ক। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের ফ্রি র্যাডিকালগুলিকে নিরপেক্ষ করে, যা কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
এছাড়া, সজনের বীজে থাকা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণার উৎপাদন বাড়িয়ে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, আর ভিটামিন ই শ্বেত রক্তকণার কার্যকারিতা বাড়ায়।
সজনের বীজে থাকা পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড যৌগও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক। এই যৌগগুলি প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধক কোষগুলি সক্রিয় রাখে, যা বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
জিংক এবং সেলেনিয়ামের মতো খনিজগুলি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সজনের বীজে এই খনিজগুলি উপস্থিত থাকে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়।
সজনের বীজের নিয়মিত সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকতে সজনের বীজের এই উপকারিতা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
সজনের বীজে থাকা বিভিন্ন উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সজনের বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি দেহের ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা হৃদয়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও, সজনের বীজে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ, এবং নিয়মিত সজনের বীজ গ্রহণ করলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তনালীগুলির প্রসারণে সহায়তা করে, যা রক্ত প্রবাহকে সহজ করে এবং হৃদয়ের চাপ কমায়।
সজনের বীজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কুইয়ারসেটিন, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রক্তনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সজনের বীজ অত্যন্ত উপকারী।
এর পাশাপাশি, সজনের বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাগনেসিয়াম হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন প্রতিরোধে সহায়তা করে। সজনের বীজের নিয়মিত সেবন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হৃদয়ের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
সজনের বীজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি হতে পারে একটি প্রাকৃতিক সমাধান, কারণ সজনের বীজে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকারের বায়োঅ্যাকটিভ কম্পাউন্ড যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। নিয়মিত সজনের বীজ গ্রহণ করলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে এবং গ্লুকোজ মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সজনের বীজে উপস্থিত ফেনলিক কম্পাউন্ড এবং ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রভাব প্রদর্শন করে। এই সকল উপাদান ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সজনের বীজের পাউডার বা তেল নিয়মিত গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস রোগীরা উপকৃত হতে পারেন।
সজনের বীজ ব্যবহারের সহজ উপায় হলো এটি নির্দিষ্ট পরিমাণে গুঁড়ো করে প্রতিদিন সকালে পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া। এছাড়াও সজনের বীজের তেল ব্যবহার করেও উপকার পাওয়া যায়। তবে সঠিক পরিমাণ এবং নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনের বীজের ব্যবহার শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনের বীজের কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ায় এটি আজকাল অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক এই উপাদানটি নিয়মিত গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে পারে।
ত্বকের যত্নে সজনের বীজ
সজনের বীজ ত্বকের যত্নে এক বিশেষ উপাদান হিসেবে পরিচিত। এতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর। সজনের বীজের তেলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, এবং ই, যা ত্বকের কোষ পুনর্নবীকরণে সহায়ক। ভিটামিন এ ত্বকের নতুন কোষ গঠনে সহায়ক, ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, এবং ভিটামিন ই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে সজনের বীজ ত্বকের ফ্রি র্যাডিক্যালসকে প্রতিহত করে, যা বার্ধক্য রোধে সহায়ক। এটি ত্বকের বলিরেখা এবং দাগ হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, সজনের বীজের তেল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের টোন উন্নত হয় এবং ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ ও কোমল।
সজনের বীজের তেল ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যাদের একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা রয়েছে, তারা সজনের বীজের তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের লালচেভাব এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। সজনের বীজের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী ত্বকের প্রদাহ ও সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক।
এছাড়া, সজনের বীজের তেল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বককে করে তোলে মসৃণ ও কোমল। শীতে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এটি খুবই কার্যকর। সজনের বীজে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের গভীরে পুষ্টি যোগায় এবং ত্বককে করে তোলে স্বাস্থ্যবান।
কীভাবে সজনের বীজ ব্যবহার করবেন
সজনের বীজের উপকারিতা পেতে এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সজনের বীজের উচ্চ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যকর বৈশিষ্ট্যগুলো বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করে উপভোগ করা যায়।
প্রথমে, সজনের বীজ কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা বীজগুলি সালাদ বা স্যুপে যোগ করা যেতে পারে। এটি খাবারে একটি হালকা মিষ্টি স্বাদ যোগ করে এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে। রান্না করা বীজগুলি বিভিন্ন সবজি বা মাংসের তরকারিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মিশ্রণগুলিতে পুষ্টি ও স্বাদ যোগ করতে কার্যকর।
দ্বিতীয়ত, সজনের বীজের তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে। সজনের বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয় এবং এটি সালাদের উপর ড্রেসিং হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সজনের বীজের তেল একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প এবং এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
তৃতীয়ত, সজনের বীজের পাউডারও বাজারে পাওয়া যায়। এই পাউডারটি বিভিন্ন স্মুদি, জুস বা ডেজার্টে মেশানো যেতে পারে। এটি সহজেই খাদ্যে মিশে যায় এবং পুষ্টিগুণ প্রদান করে।
বিভিন্ন রেসিপিতে সজনের বীজের ব্যবহার করে আপনি তার পুষ্টিগুণ উপভোগ করতে পারবেন। এটি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যোগ করা সহজ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
সজনের বীজ ব্যবহারে সতর্কতা
সজনের বীজের অসংখ্য উপকারিতা থাকলেও, এর ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রথমত, সজনের বীজ ব্যবহারের আগে এটি পরিচ্ছন্নভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত। প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার হলেও, বীজে মাটি বা অন্যান্য অমিশ্রণ থাকতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সজনের বীজের পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত সজনের বীজ গ্রহণের ফলে পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৩-৪টি বীজ গ্রহণ করা উপযুক্ত বলে মনে করা হয়, তবে কোনো নতুন উপাদান শরীরে ব্যবহার করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তৃতীয়ত, গর্ভবতী নারীদের জন্য সজনের বীজ ব্যবহার করা সমীচীন নয়। সজনের বীজে কিছু উপাদান রয়েছে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীরা এটি এড়িয়ে চলা শ্রেয়।
চতুর্থত, যদি কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় বা যদি তিনি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন, তবে সজনের বীজ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে, সজনের বীজের উপাদানগুলি ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অবশেষে, ছোট বাচ্চাদের জন্য সজনের বীজ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তাদের নাজুক শরীরে অতিরিক্ত সজনের বীজের প্রভাব হতে পারে, তাই ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।
সজনের বীজের উপকারিতার পাশাপাশি এর ব্যবহারে কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চললে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।