থাইরয়েড একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা আপনার ঘাড়ের সামনের দিকে অবস্থান করে। এই গ্রন্থিটি, যার আকৃতি একটি প্রজাপতির মতো, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ করে যা আপনার শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড হরমোনগুলি যেমন টি৩ (ট্রাইওডোথাইরোনিন) এবং টি৪ (থাইরক্সিন) সমস্ত কোষে শক্তির ব্যবহার এবং উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। এগুলি আপনার হৃদস্পন্দন, প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া এবং আপনার শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
থাইরয়েডের সমস্যার কারণ
থাইরয়েড গ্রন্থি যখন ঠিকমতো কাজ করে না, তখন তার কার্যকারিতায় দুটি প্রধান স্রোত দেখা যায় – হাইপোথাইরয়ডিজম (কম থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন) এবং হাইপারথাইরয়ডিজম (অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন)। এই সমস্যাগুলির পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যা মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
জেনেটিক্স থাইরয়েড সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পরিবারের ইতিহাসে থাইরয়েড সমস্যা থাকলে, আপনার এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এছাড়া, আপনার ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিকতাও থাইরয়েডের সমস্যার কারণ হতে পারে। এই ধরনের সমস্যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে হাশিমোটো’স থাইরয়ডিটিস এবং গ্রেভস্’ ডিজিজ। হাশিমোটো’স থাইরয়ডিটিসে, আপনার ইমিউন সিস্টেম নিজেই থাইরয়েড গ্রন্থির টিস্যুকে আক্রমণ করে, ফলে হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা দেয়।
খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকাও থাইরয়েড কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে আয়োডিন গ্রহণে। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনে অপরিহার্য, এবং এর ঘাটতি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। একইভাবে, অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণও থাইরয়েড কার্যকারিতায় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত স্ট্রেস এবং কিছু পরিবেশগত ফ্যাক্টরও থাইরয়েডের সমস্যায় প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে আছে অর্গ্যানিক সলভেন্টস, তামা, লিথিয়াম, এবং রাসায়নিক স্রোত—যা সবই থাইরয়েড সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস, প্রতিদিনের জীবন যাত্রার উন্নতি এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত যোগব্যায়াম ও থাইরয়েড
যোগব্যায়াম থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করতে পারে। এর বিভিন্ন যোগাসন শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা অর্জনে সহায়ক হয়। বিশেষত, থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট কয়েকটি আসন বিশেষভাবে উপকারী। এখানে মৎস্যাসন, সর্বাঙ্গাসন, এবং উষ্ট্রাসনের প্রভাব এবং উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মৎস্যাসন, বা ফিশ পোজ, থাইরয়েড গ্রন্থির রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং এটি থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করে। এই আসনটি করার সময় ঘাড় এবং গলা প্রসারিত হয়, যা থাইরয়েড কে উদ্দীপিত করে। ফলে, থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং হরমোন উৎপাদন স্বাভাবিক হয়।
সর্বাঙ্গাসন, বা শোল্ডার স্ট্যান্ড, একটি সম্পূর্ণ শরীরের ব্যায়াম যা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উপকারী। এই আসনে শরীরের ওজন কাঁধে ভর করে এবং পা উপরে ওঠানো হয়। এটি থাইরয়েড গ্রন্থির দিকে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এছাড়া, উষ্ট্রাসন, যা ক্যামেল পোজ নামেও পরিচিত, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনটি করতে হলে হাঁটু গেড়ে বসে মাথা এবং ঘাড় পেছনের দিকে প্রসারিত করা হয়। এর ফলে, থাইরয়েড গ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং হরমোনের সাড়ায় ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হয়।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত যোগব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর। এই বিশেষ যোগাসনগুলি থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য অবিচ্ছিন্ন পদ্ধতি প্রায়। প্রতিদিন এই আসনগুলি অভ্যাস করলে থাইরয়েড সমস্যা কমে আসে এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা যায়।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা
খাদ্যাভ্যাস থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক খাদ্য নির্বাচন করলে থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন সঠিক মাত্রায় বজায় রাখা সম্ভব হয়। প্রথমত, যোগী ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, আখরোট ইত্যাদি থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এই ধরনের খাবারগুলি থাইরয়েড ফাংশন সমর্থনে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
তাছাড়া, সমৃদ্ধ আডো মাস্টারেল এবং ডইডিনযুক্ত খাবার, যেমন দুধ, দই, ডিম, সমুদ্রের মাছ-এ হরমোন উৎপাদক গ্রন্থি সমূহের কার্যক্রম সঠিক রাখতে ভূমিকা পালন করে। আয়োডিন হরমোন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে তাই এর উপস্থিতি মানব দেহের জন্য অপরিহার্জ।
অন্যদিকে, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হলো কিছু নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চলা। যেমন, উচ্চ ফাইবারযুক্ত বা বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার থাইরয়েড ফাংশনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দুধ, শাকসবজি, ব্রকোলি, ফুলকপি ইত্যাদি গ্যাগজেন-সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকা থেক ঝ্রলনা উচিত। এই খাবারগুলো হরমোন সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে প্রচুর পানি পান করতে হবে, সুষম খাবার খেতে হবে এবং মূল্যের ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবার সেবন করতে হবে। এর ফলে থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চালু থাকবে এবং তা শরীরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং এড়িয়ে চলার মধ্য দিয়ে থাইরয়েড ফাংশনের স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার পথকে সুগম করা যায়।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি
আয়ুর্বেদ হল প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। থাইরয়েড সমস্যা সমাধানে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ কার্যকর হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু আয়ুর্বেদিক উদ্ভিদ ও জড়িবুটির ব্যবহারে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই সমস্ত উপাদানের মধ্যে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম হল অশ্বগন্ধা, যা থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি শরীরের স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি থাইরয়েডের অসামঞ্জস্যও দূর করতে পারে। অশ্বগন্ধার ব্যবহার প্রাচীনকালে থেকে প্রচলিত এবং এর কার্যকারিতা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
এর পাশাপাশি, ব্রাহ্মী, একটি শক্তিশালী আয়ুর্বেদিক উদ্ভিদ, থাইরয়েডের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে। ব্রাহ্মীর নিয়মিত ব্যবহারে থাইরয়েড হরমোনের ব্যালান্স রক্ষা করে যা থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
গুগ্গুলু, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ুর্বেদিক উপাদান, থাইরয়েডের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকলাপ বাড়ায় এবং মেটাবলিজমের কার্যকারিতা উন্নত করে। গুগ্গুলুর ব্যবহার থাইরয়েড সমস্যার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
এছাড়া, তুলসী পাতার ব্যবহারে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এসব আয়ুর্বেদিক উপাদানের ব্যবহারে থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, যাতে উপযুক্ত ডোজ ও ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। আয়ুর্বেদের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
উপযুক্ত ঘুম ও বিশ্রাম
থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতি সাধনে পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম অপরিহার্য। ঘুম স্বাভাবিকভাবে দেহের প্রক্রিয়া গুলিকে পুনরুৎপাদন এবং পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। এটি হরমোন সমতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের হরমোনের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা থাইরয়েডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
থাইরয়েড সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম অথবা হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ হল অনিদ্রা বা ঘুমের মাঝে ঘন ঘন জেগে ওঠা। দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমের ঘাটতি দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
ঘুমের সময়সূচী ঠিক রাখার জন্য নিশ্চিত করুন যে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাবেন এবং একই সময়ে জেগে উঠবেন। ঘাসফড়িং বাদে রাখা উচিত এবং দিনে ঘুমানো থেকে বিরত থাকতে হবে। রাতে ঘুমের আগে চা বা কফিভর্তি পানীয় গ্রহণ এড়িয়ে চলুন, কেননা এতে ঘুম করবে না, যার ফলে ঘুমের গুণমানও কমে যাবে।
ঘুমের পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ। ঘরটি যেন শান্ত, অন্ধকার এবং শীতল থাকে। বেডরুমে কম্পিউটার বা টিভি ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন এবং মোবাইল ফোন আরো দূরে রাখুন। এই ধরনের ব্লু লাইট ফুল প্রতি ঘুমের চক্রে প্রভাব ফেলে, যা ঘুমকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
বিশ্রামের জন্য নিয়মিত অনুশীলন যেমন যোগ ব্যায়াম বা মেডিটেশন প্রাকটিস করা যেতে পারে। এই কার্যকলাপ গুলি মন ও দেহকে শান্ত ও স্থির রাখতে সাহায্য করে, যা হরমোনের সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ ও থাইরয়েড
মানসিক চাপ থাইরয়েডের সঠিক কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে এবং এই এটি দৃঢ়ভাবে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, মানসিক চাপের কারণে শরীরের কর্টিসল হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে, যা থাইরয়েড হরমোনের সঠিক উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে। তখন থাইরয়েডের হাইপোথাইরোডিজম বা হাইপারথাইরোডিজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়।
মানসিক চাপ কমানোর জন্য কিছু প্রকারের ঘরোয়া পদ্ধতি খুবই কার্যকর হতে পারে। প্রানায়াম বা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক চাপ প্রশমিত করা যায়। প্রতিদিন নিয়মিত প্রানায়াম করার ফলে শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে তোলা যায়, যা চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মনের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও, ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমানোর একটি প্রামাণ্য উপায়। ধ্যান মনকে শান্ত করে এবং থাইরয়েডের জন্য উপকারী হতে পারে। প্রতিদিন বিশেষ কিছু সময় নিয়ে ধ্যান করলে মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ে, হার্ট রেট কমে এবং সার্বিকভাবে স্ট্রেস হরমোনের লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অন্যান্য রিলাক্সেশন টেকনিক যেমন যোগব্যায়াম ও সংগীত থেরাপি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে যোগায়মান রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীর ও মনকে নিরাময় করে। একইভাবে, সংগীত থেরাপি মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
মোটের উপর, মানসিক চাপ কমানোর জন্য উপরের ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি নিয়মিত প্রয়োগ করলে থাইরয়েডের সঠিক কার্যকারিতায় সহায়ক হতে পারে। এই পদ্ধতিগুলি সহজ, কার্যকর এবং আয়ুর্বেদিকভাবে নির্ভরযোগ্য, যা দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ্য জীবনধারণে সহায়ক।
প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট
প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট এবং ভেষজ উপকরণগুলির মধ্যে এমন কিছু বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা থাইরয়েড হরমোনের নির্ভুল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত এমনই কিছু প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্টের মধ্যে মগফোল এবং কাঁচা তুলসী পাতার রস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলি আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগায় এবং থাইরয়েড সমস্যার বিভিন্ন দিক নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়ক হয়।
মগফোলে বিদ্যমান থাকা জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত মগফোল গ্রহণ করলে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে এবং থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বাড়ে। সাধারণত প্রতিদিন ১-২ টি মগফোল খাওয়া যেতে পারে। এটি কাঁচা বা সামান্য ভেজে ব্যবহার করতে পারেন।
অপরদিকে তুলসী পাতার রসের ভিতরে রয়েছে এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে৷ তুলসী পাতা দিয়ে রস তৈরির জন্য প্রথমে কিছু কাঁচা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং পরে পিষে রস বের করতে হবে। প্রতিদিন এক চা-চামচ তুলসী পাতার রস খেলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কার্যকরী হতে পারে। এছাড়াও তুলসীর মধ্যে থাকা anti-oxidant উপাদান শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালস কমায়, যা থাইরয়েড ফাংশন্সের উপর প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের জন্য আসোটিল এবং ল কার্নিটাইন দুইটি প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট ব্যবহৃত হয়, যা থাইরয়েড হরমোনের সংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। যদিও এই ভেষজ ও প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্টগুলি অনেক ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে, তবে সঠিক প্রয়োগ এবং পরিমাণ সম্পর্কে আর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবসময়ই বুদ্ধিমত্তার কাজ।
প্রচলিত ভুল ধারনা এবং সঠিক তথ্য
থাইরয়েড সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে যা প্রায়শই মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এই ভুল ধারণাগুলি না শুধরানো হলে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয় না। থাইরয়েড সমস্যার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য এই ধরনের ভুল ধারণাগুলি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।
প্রথমত, অনেকেই মনে করে থাকেন যে শুধুমাত্র গলা ফুলে উঠলে বা গলায় গোটা দেখা দিলে থাইরয়েড সমস্যা হয়েছে বোঝা যায়। বাস্তবে, থাইরয়েড সমস্যার অনেক লক্ষণ রয়েছে যা গলা ফুলে উঠার আগেই দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, ত্বক ও চুলের সমস্যার মতো লক্ষণও অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়ত, মনে করা হয়ে থাকে যে থাইরয়েড সমস্যার চিকিৎসা করতে হলে বাকি জীবন ঔষধ খেয়ে যেতে হবে। যদিও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এটি সত্য হতে পারে, তবে প্রাথমিক অবস্থায় থাইরয়েড ধরা পড়লে ও সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে, জীবন ধারন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেও থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
তৃতীয়ত, অনেকেই মনে করেন যে থাইরয়েড সমস্যা কেবলমাত্র মহিলাদেরই হয়। তবে, এটি একটি ভুল ধারণা। পুরুষেরাও থাইরয়েড সমস্যায় ভুগতে পারেন এবং এটি এমন একটি সমস্যা যা সকল লিঙ্গের মানুষের মধ্যেই দেখা দিতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যা হল একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যার সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত মানসিক চাপহীন জীবনযাপনের মাধ্যমে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অতএব, থাইরয়েড সমস্যার বিষয়ে সচেতন হয় এবং এর যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত, ভুল ধারণায় আস্থা না রেখে।