ডায়াবেটিস একটি জটিল স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অবস্থা যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, যা আরও ক্ষতিকর হতে পারে। খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক মাত্রায় রাখতে সহায়তা পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিকল্পনা করা খুবই জরুরি। শর্করা, প্রোটিন, এবং ফ্যাটের সঠিক সমন্বয় তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কম গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (GI) বা নিম্ন গ্লাইকেমিক লোডের খাবার গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমন: শাকসবজি, শস্যদানা, এবং ফল। এই ধরনের খাবার ধীরে ধীরে শর্করা ছাড়ায় এবং রক্তে ঘনীভবন করে না, ফলে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামলে চলতে হবে। অল্প অল্প করে একাধিকবার খাবার গ্রহণ করা উচিত এবং প্রত্যেক খাবারের মাঝে সামান্য বিরতি। অনেক সময় একবারে বেশি খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও প্রোটিন, ফাইবার, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সাথে সাথে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর ও খাদ্যসম্পন্ন খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস রোগীরা শুধুমাত্র তাদের শর্করার মাত্রা নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেও বজায় রাখতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের সবজির প্রয়োজনীয়তা
🔎︎ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জটিল ব্যাপারগুলির মধ্যে সময়মত এবং পুষ্টিকর খাদ্য নির্বাচন অন্যতম। সবজি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কেননা এতে পুষ্টিগুণ রয়েছে যা রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। সবজির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারসমৃদ্ধ গুণাগুণ শরীরের বিপাকীয় কার্যাবলীকে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় অপরিহার্য।
তাজা সবজির ফাইবার কার্বোহাইড্রেটের হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়, যা রক্তে শর্করার স্তর ধীরগতিতে বাড়াতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, সবুজ শাক, ব্রকলি, এবং শিম ধনেপাতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফাইবার প্রদান করে, যা গ্লুকোজ শোষণের হার কমিয়ে দেয় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এই সকল সবজি গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
পুষ্টিগুণে পূর্ণ সবজির মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং ভিটামিন সি, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই সকল পুষ্টি উপকার বয়ে আনে, কেননা তারা প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকেন।
সবজির মধ্যে সামান্য কার্বোহাইড্রেট থাকলেও, স্বল্প গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সম্পন্ন সবজি গুরুত্বপূর্ন। এই ধরনের সবজি ধীরে ধীরে পচে, রক্তে শর্করার স্তরে তীব্র বাড়াবাড়ি ঘটায় না। উদাহরণস্বরূপ, মটরশুঁটি, লেটুস, এবং বাঁধাকপি ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
সার্বিকভাবে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক সবজি নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা কোন সবজি খাবেন এবং কী পরিমাণ খাবে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এই সমস্ত কারণগুলি যদি বিবেচনায় নেয়া হয় তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কাজ অনেক সহজ হয়ে উঠবে এবং জীবনযাত্রা উন্নত হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যখন সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয় আসে। কিছু নির্দিষ্ট সবজি রয়েছে যেগুলোর মধ্যে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে এবং এগুলি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিকূল হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, আলু, ভুট্টা, এবং বীট উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
আলু
আলু একটি জনপ্রিয় কিন্তু উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ সবজি, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আলুতে স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকে যা সহজে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টের জন্য ক্যালোরির গ্রহণকে সীমিত রাখতে আলু এড়িয়ে চলা বা নিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়া প্রয়োজন।
ভুট্টা
ভুট্টা আরেকটি উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ সবজি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম সুবিধাজনক হতে পারে। এক কাপ ভুট্টার মধ্যে প্রায় ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা রক্তে সুগার লেভেল বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করে। ভুট্টাতে ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকলেও, শর্করা সামগ্রী উচ্চ হওয়ায় এটি খাওয়া নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিৎ।
বীট
বীট উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ আরেকটি সবজি, যা দুপুরের খাবারে একটি সুস্বাদু সংযোজন হয়েও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে। অন্য সবজির তুলনায় বীটের মধ্যে প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, যা প্রধানত গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজের মাধ্যমে রক্তে আসে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এ সমস্ত সবজি নিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারেন যেখানে অন্যান্য কম শর্করা সমৃদ্ধ সবজির বৈচিত্র্যও অন্তর্ভুক্ত থাকে খাবারের সুষমতার জন্য। খাদ্যগ্রহণ পরিকল্পনা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, যেমন পুষ্টিবিদ বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত যা স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অনুসরণ নিশ্চিত করবে।
উচ্চ গ্লিসেমিক সূচক সমৃদ্ধ সবজি
রক্তের শর্করা স্থিতিশীল রাখার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকা নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ গ্লিসেমিক সূচক যে সবজিগুলিতে বেশি, সেগুলি রক্তের শর্করা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই কিছু সবজির আলোচনা করা হচ্ছে, যেমন মিষ্টি আলু ও কুমড়া।
মিষ্টি আলু একটি পুষ্টিকর খাদ্য হলেও এটি উচ্চ গ্লিসেমিক সূচক সমৃদ্ধ। এর মানে হলো মিষ্টি আলু খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে ভাজা বা বেকড মিষ্টি আলু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যদিও মিষ্টি আলুতে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রাচুর্য রয়েছে, তবুও ডায়াবেটিস রোগীকে এটি সেবনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
অপরদিকে কুমড়া, যা এক ধরনের গ্রীষ্মকালীন সবজি, তা উচ্চ গ্লিসেমিক সূচক সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তের শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে। কুমড়ার প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি স্বাদের কারণে এটি খেলে শর্করার মাত্রায় দ্রুত পরিবর্তন সৃষ্টি হয়। সুতরাং, কুমড়ার মত উচ্চ গ্লিসেমিক সূচকসহ সবজি ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে, ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এমন সবজি বেছে নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে, যেগুলির গ্লিসেমিক সূচক কম। এই ধরনের সবজি রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে এবং তা অনেকসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
উক্ত সবজিগুলি ছাড়া উচ্চ গ্লিসেমিক সূচক সমৃদ্ধ অন্যান্য সবজি, যেমন মূলা, করলাও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম খাওয়াই শ্রেয়। সঠিক খাদ্যতালিকা নির্বাচন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেজন্যে খাদ্যতালিকা তৈরি করার সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
অন্যান্য শাক সবজি
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে কিছু মোটা ও অধিক ক্যালোরি যুক্ত শাক সবজি সীমিত রাখা উচিত। এমন কিছু শাক সবজি রয়েছে যা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রতিকূল হতে পারে। এই পর্বে মুলা এবং মিষ্টি কুমড়া নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মুলা: মুলা সাধারণত একটি স্বাস্থ্যকর শাক সবজি হিসেবে পরিচিত, কিন্তু এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সংকটময় হতে পারে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। মুলায় প্রাকৃতিক চিনি (glucose) উপস্থিত থাকে, যা রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এই গ্লুকোজ রিভিউ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সংগ্রহ হয়, ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের রক্তে শর্করার মাত্রা সহজে বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের মুলা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
মিষ্টি কুমড়া: মিষ্টি কুমড়া বা “বাটারনাট স্কোয়াশ” একটি গ্রহণীয় শাক সবজি হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিৎ। এই সবজিটি অত্যন্ত ক্যালোরি যুক্ত এবং উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত। মিষ্টি কুমড়ায় সুগার ও স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে সক্ষম। এগুলিতে থাকা উচ্চ কার্বোহাইড্রেট দ্রুত পান এর ফলস্বরূপ ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড সুগার লেভেল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডায়াবেটিস রোগীদের এই ধরনের মোটা শাক সবজির ভূমিকায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। প্রতি বেলায় এদের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রসেস করা সবজি
প্রসেস করা সবজি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। এই ধরনের সবজি সাধারণত প্রিজারভেটিভ, চিনি এবং লবণসহ বিভিন্ন সংরক্ষণ উপাদান ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হয়। লবণের অতিরিক্ত সেবন রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
ক্যানড্ সবজিতে সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার কারণে সোডিয়ামের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে রক্তচাপে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। ক্যানড্ সবজিগুলোতে প্রিজারভেটিভ হিসেবেও ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম ডিসোডিয়াম ইডিটি এর মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা পুষ্টিগুণ হ্রাস করে এবং ডায়াবেটিস পরিচালনার জন্য শরীরের প্রদাহের পরিমাণ বাড়ায়।
প্যাকেটজাত সবজির ক্ষেত্রেও একই রকম সমস্যা বিদ্যমান থাকে। প্যাকেটজাত সবজিগুলোতে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত চিনি এবং প্রিজারভেটিভ যোগ করা হয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ লেভেল দ্রুত বাড়াতে পারে। এছাড়া, এই প্রকার সবজিগুলোর পুষ্টিমানও তাজা সবজির তুলনায় কম থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের তাই পরামর্শ দেওয়া হয় তাজা সবজি খাওয়া এবং প্রসেস করা সবজি থেকে দূরে থাকার জন্য। যদি ক্যানড্ বা প্যাকেটজাত সবজি ছাড়া উপায় না থাকে, সেক্ষেত্রে লেবেল ভালোভাবে পড়ে লো-সোডিয়াম এবং সুগার-ফ্রি সাব্জি পছন্দ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে তাজা এবং পুষ্টিকর সবজি খাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত।
কোন সবজি খাওয়া উচিৎ
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় কোন শাক এবং সবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ তা জানাটা অত্যন্ত জরুরি। এমন কিছু শাক-সবজি রয়েছে যেগুলোতে শর্করার মাত্রা উচ্চ এবং দ্রুত রক্তের শর্করা বৃদ্ধি করে, সেই শাক-সবজি এড়িয়ে চলা উচিত। তবে, এর বিকল্প হিসেবে এমন কিছু সবজি গ্রহণ করা যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
নিম্ন শর্করা এবং উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ সবজি যেমন পালং শাক, ব্রকলি, করলা, কাঁচা করমচা ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। পালং শাক এবং ব্রকলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার এবং বিভিন্ন ভিটামিন থাকে যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। করলা প্রাকৃতিকভাবে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। একইভাবে, কাঁচা করমচা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে।
গাজর, টমেটো, খিচুরি কুমড়ো এবং বাঁধাকপিও স্বাস্থ্যকর সবজি হিসেবে পরিচিত। উচ্চ শর্করা থেকেও বিপরীতে কম শর্করাযুক্ত সবজিতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে যা রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গাজর এবং টমেটোতে কার্বোহাইড্রেট কম এবং ফাইবার, ভিটামিন সি, এ, কে এবং পটাশিয়াম বেশি থাকে। বাঁধাকপিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের জন্য উপকারী।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তনের মধ্যে এইসব নিম্ন শর্করা এবং উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ সবজি যুক্ত করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারেন। এই ধরনের শাক-সবজির প্রাপ্যতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবগত থাকলে, সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা করা অনেক সহজ হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক পরামর্শ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোগীকে অবশ্যই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। এই প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়, ডায়াবেটিস রোগীদের দিনে ছোট ছোট ভাগে খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। সকালের নাস্তা কখনই বাদ দেওয়া উচিৎ নয়; এটি সারাদিনের শক্তির সরবরাহ বজায় রাখতে সহায়ক।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যেমন পালং শাক, কাঁচা শাক, লাউ, টমেটো ইত্যাদি। তবে যেসব শাক বা সবজি শর্করাযুক্ত, যেমন মিষ্টি কুমড়া, এড়িয়ে চলাই ভালো। ফলমূলের মধ্যে কম শর্করাযুক্ত ফল নির্বাচন করা বাঞ্ছনীয়, যেমন আপেল, বারি বেল ইত্যাদি। ফাইবার সমৃদ্ধ শস্য, যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, এবং বার্লি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাংসের পরিবর্তে চর্বিবিহীন মাছ এবং ডাল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যা প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। চর্বিযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত চিপস এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়াও, একটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি পান করা। প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান ফ্লুইড ব্যালান্স রক্ষা করে এবং মেটাবলিজমের হার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হল, ক্যাফেইন, যেমন চা ও কফি, কম পরিমাণে পান করা। ক্যাফেইনের অতিরিক্ত গ্রহণ রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। তাছাড়া, রান্নার তেলে জিঞ্চিনিয়া অ্যালিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ তেল যেমন অলিভ অয়েল ব্যবহারে ভালো।
এছাড়াও, খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং মানসিক চাপের স্তর নিয়ন্ত্রণের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সকল পরামর্শ একত্রে গ্রহণ করলে, ডায়াবেটিস রোগীরা সহজে এবং কার্যকরভাবে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।