ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক ডায়েটের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক খাদ্যাভ্যাস তাদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা তৈরি করার সময় কিছু মৌলিক বিষয় বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ও গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। কার্বোহাইড্রেট শর্করার উৎস হিসেবে কাজ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাই উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার যেমন সাদা চাল ও চিনি পরিহার করা উচিত। এর পরিবর্তে কম GI যুক্ত খাবার যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, ও শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, প্রোটিন ও ফ্যাটের সঠিক পরিমাণ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রোটিন শরীরের পেশী ও টিস্যু গঠনের জন্য অপরিহার্য, এবং সঠিক পরিমাণে ফ্যাট গ্রহণ শরীরের শক্তির চাহিদা পূরণ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলা উচিত এবং মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করা উচিত।
তৃতীয়ত, ফাইবার গ্রহণের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। ফলমূল, শাকসবজি, ও সম্পূর্ণ শস্যের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
এছাড়া, ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত ছোটো ছোটো খাবার গ্রহণ করা উচিত, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। পানির যথেষ্ট পরিমাণ গ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে এবং বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত ডায়েট ও ব্যায়ামের সমন্বিত পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।
চালের আটা ও গমের আটা: পুষ্টিগুণের তুলনা
চালের আটা এবং গমের আটা উভয়ই আমাদের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে এদের পুষ্টিগুণে কিছু পার্থক্য রয়েছে। চালের আটা মূলত চাল থেকে প্রাপ্ত হয় এবং এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। ১০০ গ্রাম চালের আটাতে প্রায় ৮০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, চালের আটাতে প্রোটিন এবং ফাইবারের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবসময় উপকারী নয়।
গমের আটা, বিশেষ করে সম্পূর্ণ গমের আটা, প্রোটিন এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস। ১০০ গ্রাম গমের আটাতে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন এবং ১০ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা রক্তে চিনি স্তরের উপর ধীর এবং স্থিতিশীল প্রভাব ফেলে। এই ফাইবার গ্লুকোজের শোষণ প্রক্রিয়াকে ধীর করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। এছাড়া গমের আটাতে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানও থাকে, যা সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
চালের আটা যদিও দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে, তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি সবসময় উপযুক্ত নয় কারণ এতে ফাইবার এবং প্রোটিনের পরিমাণ কম। অন্যদিকে, গমের আটা ধীরে ধীরে গ্লুকোজ রিলিজ করে, যা রক্তে চিনি স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গমের আটা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং গ্লাইসেমিক লোডের গুরুত্ব
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য পছন্দের ক্ষেত্রে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) এবং গ্লাইসেমিক লোড (GL) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূচক। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) একটি পরিমাপ যা নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের পর রক্তে শর্করার স্তর কিভাবে বৃদ্ধি পায় তা নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে পরিমাপ করা হয়, যেখানে উচ্চ GI যুক্ত খাদ্য দ্রুত রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে এবং নিম্ন GI যুক্ত খাদ্য ধীরে ধীরে শর্করা বৃদ্ধি করে।
গ্লাইসেমিক লোড (GL) খাদ্যের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং সেই খাদ্যের পরিমাণের উপর নির্ভর করে রক্তে শর্করার প্রভাব সম্পর্কে আরও সঠিক ধারণা দেয়। GL হিসাব করার জন্য, GI মানকে খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট পরিমাণের সাথে গুন করে এবং তারপর ১০০ দ্বারা ভাগ করা হয়। একটি খাদ্যের GL যত কম হবে, তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তত উপকারী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং গ্লাইসেমিক লোডের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্ন GI এবং GL যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করা যায়, যা ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে 🔎︎ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, চালের আটা এবং গমের আটার মধ্যে GI এবং GL এর পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোনটি বেশি উপকারী তা নির্ধারণ করা সহজ হয়ে যায়।
সঠিক খাদ্য নির্বাচন করার সময়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম GI এবং GL যুক্ত খাদ্য বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কিত জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়।
চালের আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং গ্লাইসেমিক লোড
চালের আটা বা রাইস ফ্লাওয়ারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) এবং গ্লাইসেমিক লোড (GL) ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটি সংখ্যা যা খাদ্যের কারণে রক্তে শর্করার স্তর কত দ্রুত বাড়ে তা নির্দেশ করে। চালের আটার GI সাধারণত ৭০ বা তার বেশি হয়, যা এটি উচ্চ গ্লাইসেমিক খাদ্য হিসেবে পরিচিত করে। উচ্চ GI মানে হলো এই আটা দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অপর দিকে, গ্লাইসেমিক লোড (GL) খাদ্যের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং একক পরিবেশনের কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। চালের আটার GL সাধারণত উচ্চ, যা এটিকে ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টের জন্য কম উপযোগী করে তোলে। যখন কোনো খাদ্যের GL উচ্চ হয়, তখন তা শরীরে গ্লুকোজের দ্রুত প্রবেশ করায় এবং ইনসুলিনের অধিক নিঃসরণ ঘটায়। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে, চালের আটা ব্যবহারের কিছু উপায় রয়েছে যা এই প্রভাবগুলো কমাতে পারে। অন্য কম GI খাদ্যের সাথে মিশিয়ে চালের আটা ব্যবহার করা যেতে পারে, যা রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া, প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যের সাথে মিশিয়ে চালের আটা ব্যবহার করলে GI ও GL কম হতে পারে।
চালের আটা যদিও বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে জনপ্রিয়, তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এর ব্যবহার সীমিত রাখা উচিত। খাদ্য পরিকল্পনায় চালের আটার পরিবর্তে গমের আটা বা অন্যান্য কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা উত্তম।
গমের আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং গ্লাইসেমিক লোড
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) এবং গ্লাইসেমিক লোড (GL) হল এমন দুটি পরিমাপক যা খাদ্যের রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব এবং হজমের গতি নির্ধারণ করে। গমের আটার GI সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ এর মধ্যে থাকে, যা মাঝারি হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি নির্দেশ করে যে গমের আটা গ্রহণের পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তবে খুব বেশি নয়।
গ্লাইসেমিক লোড (GL) হল GI এবং খাদ্যের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল একটি পরিমাপক। গমের আটার GL সাধারণত ১০-১৫ এর মধ্যে থাকে। এটি নির্দেশ করে যে গমের আটা খেলে রক্তে শর্করা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গমের আটার GI এবং GL গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। গমের আটা থেকে তৈরি রুটি হজম হতে তুলনামূলকভাবে ধীরগতি হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় না। ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
তবে, শুধুমাত্র GI এবং GL নির্ভর করে খাদ্য নির্বাচন করা উচিত নয়। গমের আটার মধ্যে থাকা অন্যান্য পুষ্টিগুণ যেমন ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অতএব, গমের আটা থেকে তৈরি রুটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে, তবে এটি অন্যান্য খাদ্য এবং পুষ্টির সাথে সুষমভাবে গ্রহণ করা উচিত।
উপাদান | চালের আটা (১০০ গ্রাম) | গমের আটা (১০০ গ্রাম) | স্বাস্থ্যউপকারিতা |
---|---|---|---|
ক্যালরি | ৩৬৬ ক্যালরি | ৩৬৪ ক্যালরি | দুটিতেই প্রায় একই পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে। |
প্রোটিন | ৬ গ্রাম | ১২.৭ গ্রাম | গমের আটা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। |
কার্বোহাইড্রেট | ৮০ গ্রাম | ৭২ গ্রাম | চালের আটায় বেশি কার্বোহাইড্রেট থাকে। |
ফাইবার | ২.৪ গ্রাম | ১০.৭ গ্রাম | গমের আটায় অধিক ফাইবার থাকে, যা পাচন সহায়ক। |
ফ্যাট | ১ গ্রাম | ২ গ্রাম | গমের আটায় সামান্য বেশি ফ্যাট থাকে। |
ক্যালসিয়াম | ১০ মিলিগ্রাম | ৩৪ মিলিগ্রাম | গমের আটায় বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। |
আয়রন | ০.৪ মিলিগ্রাম | ৩.৫ মিলিগ্রাম | গমের আটায় বেশি আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩৫ মিলিগ্রাম | ১৩৮ মিলিগ্রাম | গমের আটায় ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে, যা মাংসপেশির কার্যকারিতা ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। |
ভিটামিন B1 (থায়ামিন) | ০.০৬ মিলিগ্রাম | ০.৪ মিলিগ্রাম | গমের আটায় বেশি ভিটামিন B1 থাকে, যা শক্তি উৎপাদনে সহায়ক। |
ভিটামিন B2 (রাইবোফ্লাভিন) | ০.০১ মিলিগ্রাম | ০.১ মিলিগ্রাম | গমের আটায় বেশি ভিটামিন B2 থাকে, যা কোষের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়ক। |
ভিটামিন B3 (নায়াসিন) | ১.৫ মিলিগ্রাম | ৬.৪ মিলিগ্রাম | গমের আটায় বেশি ভিটামিন B3 থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ও পাচনতন্ত্রের উন্নয়নে সহায়ক। |
ফসফরাস | ৪৩ মিলিগ্রাম | ৩৪৬ মিলিগ্রাম | গমের আটায় বেশি ফসফরাস থাকে, যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। |
পটাশিয়াম | ৭৬ মিলিগ্রাম | ৪৫২ মিলিগ্রাম | গমের আটায় পটাশিয়াম বেশি থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। |
জিঙ্ক | ০.৭ মিলিগ্রাম | ৩.৫ মিলিগ্রাম | গমের আটায় বেশি জিঙ্ক থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। |
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চালের আটার উপকারিতা ও অসুবিধা
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকা গঠনে চালের আটার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চালের আটা পুষ্টিগুণে ভরপুর, তবে এর কয়েকটি দিক রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিবেচনা করা প্রয়োজন। চালের আটা সাধারণত গ্লুটেনমুক্ত হয়, যা গ্লুটেন সংবেদনশীল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুবিধাজনক। গ্লুটেনমুক্ত খাবার হজমে সহায়ক এবং পেটের সমস্যাগুলি কমিয়ে আনে।
তবে, চালের আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) তুলনামূলকভাবে বেশি। উচ্চ GI মানে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চালের আটা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারের সাথে মিলিয়ে খাওয়া উচিত।
চালের আটা ভিটামিন বি, আয়রন, এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। এই উপাদানগুলি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, রক্ত সঞ্চালন, এবং মেটাবলিজমের উন্নতি করতে সহায়তা করে। যদিও চালের আটা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, এর উচ্চ কার্বোহাইড্রেট কন্টেন্টও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিক কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চালের আটা ব্যবহার করতে গেলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রথমত, পরিমাণমতো চালের আটা ব্যবহার করা উচিত, এবং দ্বিতীয়ত, অন্যান্য উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারের সাথে মিলিয়ে খাওয়া উচিত। এছাড়া, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খাদ্যতালিকা গঠনে চালের আটার ভূমিকা নির্ধারণ করা উচিত।
এইভাবে, চালের আটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কখনো উপকারী হতে পারে, কখনো ক্ষতিকরও হতে পারে। খাদ্যতালিকায় এর স্থান নির্ধারণে পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গমের আটার উপকারিতা ও অসুবিধা
গমের আটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। গমের আটায় ফাইবারের পরিমাণ বেশ ভালো থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবার ধীরে ধীরে কার্বোহাইড্রেট হজম হতে সাহায্য করে, ফলে রক্তে শর্করা দ্রুত বৃদ্ধি পায় না। এছাড়া, গমের আটায় ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, আয়রন, এবং প্রোটিন আছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
গমের আটা হজম সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। গমের আটার মধ্যে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, গমের আটা খাওয়ার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। গ্লুটেন সমৃদ্ধ হওয়ায় গমের আটা কিছু মানুষের জন্য সমস্যা হতে পারে। গ্লুটেন অসহিষ্ণুতা বা সিলিয়াক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য গমের আটা খাওয়া নিরাপদ নয়। এছাড়া, গমের আটা অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
গমের আটা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ গমের আটা (whole wheat flour) সবচেয়ে উপকারী। সম্পূর্ণ গমের আটা অপরিশোধিত এবং এতে প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। এতে ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গমের আটা একটি ভালো পছন্দ হতে পারে, তবে এটি খাওয়ার পরিমাণ এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কোনটি ভালো?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চালের আটা এবং গমের আটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কিছু বিবেচ্য বিষয় উঠে আসে।
প্রথমত, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, যা খাদ্য গ্রহণের পর রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার হার নির্দেশ করে। গমের আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সাধারণত ৫৫ থেকে ৭০ এর মধ্যে থাকে, যা মাঝারি রকমের। অন্যদিকে, চালের আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে বেশি, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম উপকারী হতে পারে। তাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের দিক থেকে গমের আটা কিছুটা বেশি উপকারী।
দ্বিতীয়ত, ফাইবার কন্টেন্ট বা আঁশের পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ। গমের আটা আঁশ সমৃদ্ধ, যা হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। চালের আটা তুলনামূলকভাবে কম আঁশযুক্ত, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কম উপকারী হতে পারে।
তৃতীয়ত, পুষ্টিগুণ বিচার করলে, গমের আটাতে ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চালের আটা পুষ্টির দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকতে পারে।
তবে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, খাদ্যাভ্যাস এবং পরামর্শকৃত চিকিৎসকের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে, গমের আটা বেশি উপযোগী মনে হলেও, ব্যক্তিগত অবস্থার উপর নির্ভর করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সুতরাং, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গমের আটা কিছুটা বেশি উপকারী বলে বিবেচিত হলেও, ব্যক্তিগত পরিস্থিতি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য নির্বাচন করাই উত্তম।